Wednesday, May 10, 2017

অনন্য এবাদত নামায


মহান আল্লাহ পাক মানব ও দানব সৃষ্টির রহস্যের সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন, ঐশীগ্রন্থ আল-কুরআনে। তিনি এরশাদ করেছেন, 
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ-
 অর্থ: আর আমি জ্বীন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এজন্য যেন তারা শুধু আমারই বন্দেগী করে।( সূরা যারিয়াত; ৫৬) 
 এ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান হয়যে, মানব ও জ্বীন জাতির সৃষ্টির রহস্য হল, ¯্রষ্ট্রা ও পালনকর্তা আল্লাহ পাকের বন্দেগী করা, আর এবন্দেগীর মাধ্যমেই মানবতার উৎকর্ষ সাধন সম্ভব। মানব জতিকে পৃথিবীতে যেহেতু আল্লাহ পাক তাঁর প্রতিনিধি রূপে প্রেরণ করেছেন, তাই মহান আল্লাহ পাক সমগ্র সৃষ্টি জগৎকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করে রেখেছেন, পবিত্র কোরআনেই রয়েছে এর ঘোষণা :
هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا-
তিনিই সেই আল্লাহ পাক, যিনি তোমাদের উপকারার্থে সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর সব কিছু।   (আল-বাক্বারা ২৯)
 আল্লাহ পাক মানুষের রিযিকের যাবতীয় ব্যবস্থা জমীনের অভ্যন্তরে রেখে দিয়েছেন। যে যখনই যথা নিয়মে জমীনের উপর মেহনত করে, আল্লাহ পাক তার কাম্য বস্তু দান করেন, আর এ উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক বন্দার জন্যে আসমান থেকে বারি বর্ষণ করেন, চন্দ্র-সুর্য দ্বারা আলো বিতরণ করেন,বীজ থেকে অঙ্কুেরাদগম করেন, ক্রমে ক্রমে তা হতে নানান জাতের শষ্য ও ফলমূলের ব্যাপক সমারহ করেন। তাই বান্দার কর্তব্য হলো, আল্লাহ পাকের অনন্ত-অসীম নেয়ামত ভোগ করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তাঁর বন্দেগী করা। এপর্যায়ে প্রথম কর্তব্য হলো আল্লাহ পাকের তৌহীদ বা একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করা, শিরক বর্জন করা এবং আল্লাহ পাকের যাবতীয় বিধি-নিষেধ পালন করা। এখানে একথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে , আল্লাহ পাকের বন্দেগী শুধু কয়েকটি নিদিষ্ট এবাদতের মধ্যেই সীমিত নয়; বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রে মানুষের যাবতীয় কর্মকান্ড যথা পানাহার, আয়-রোজগার, বিয়ে-শাদী এক কথায় সব কিছু হতে হবে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তাঁর পছন্দনীয় তরীকায়। আল্লাহ পাক কোরআনে কারীমে এসত্যটিকে এভাবে ঘোষণা করেছেন:
قُلْ إنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
(হে রসূল!) আপনি ঘোষনা করুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহই জন্যে।
মরমী কবি তাই বলেছেন
نوشيدنش تابع حق را ديدنش نا ديدنش দ্ধ خوردنش خوابيدنش
বান্দার দেখা না দেখা সব কিছুর মধ্যেই থাকতে হবে আল্লাহ পাকের তাবেদারী,তার পানাহারে মাঝে এমনকি নিদ্রগমনেও।
قرب حق از هرعمل مقصود دار দ্ধ  تازتوگردد جلالش آشكار
প্রত্যেকটি কাজের উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভ,আর শুধু এভাবেই তোমার দ্বারা আল্লাহ পাকের কুদরতের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। এক কথায় মানুষের দুনিয়াবী জীবনে একমাত্র লক্ষ্য হবে আল্লাহ পাকের এবাদত। আর যাবতীয় এবাদতের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবাদত হল নামাজ। আমরা জানি যে ইসলাম ধর্ম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। নামাজ তার মধ্যে অন্যতম এবং এবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই পবিত্র কুরআনে ৮২ জায়গায় নামাজ কায়েম করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। ইসলামে সালাতের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি আল্লাহ পাকের রহমত এবং ইহ-পরোকালের মুক্তিলাভের প্রধান প্রধান অবলম্বন হিসাবে নামাজ বিশেষ তাৎপর্যবহ।
নামজের  গুরুত্ব ও তাৎপর্য   
নামাজের মাধ্যমে একজন মানুষ আল্লাহ পাকের সাথে দেয়া প্রতিশ্রুতির বার বার প্রতিফলন ঘটায়। সে তার প্রভু বা ¯্রষ্টাকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে, সে তার প্রতিশ্রুতি পালন করে যাচ্ছে। এ নামাজের মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভ করে। স্বর্গীয় প্রেমের ভুবনে নামাজ হল অতুলনীয়। এর মাধ্যমে সরাসরি ভাবে আল্লাহ পাকের সাথে বান্দার সম্পর্ক স্থাপন হয়। যেমন হাদীস শরীফে রসূলুল্লাহ স. বলেন যে, আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন:“ আমি নামাজ কে আমার এবং আমার বান্দার মাঝে অর্ধ অর্ধ করে ভাগ করেছি এবং আমার বান্দা আমার কাছে যা চায় তা আমি তাকে দিয়ে থাকি। যখন বান্দা বলে الحمد لله رب العالمين ,তখন আল্লাহ পাক বলেন: আমার বান্দা আমার প্রশংসা করলো। বান্দা যখন বলে,  الرحمن الرحيمতখন আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা আমার গুণাগুণ বর্ণনা করলো
। বান্দা যখন বলে, مالك يوم الدين তখন আল্লাহ পাক বলেন: আমার বান্দা আমার মহাত্ম্য বর্ণনা করলো। কোন কোন বর্ণনায় আছে যে আল্লাহ পাক উত্তরে বলেন:  فوض الي عبدي অর্থাৎ, বান্দা আমার উপর (সবকিছু)সমর্পণ করলো।অতঃপর, যখন বান্দা বলে,
  إياك نعبد وإياك نستعين তখন আল্লাহ পাক বলেন: এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যেকার কথা, এবং আমার বান্দা আমার কাছে যা চাইবে আমি তাকে তাই দেবো। অতঃপর বান্দা যখন শেষ পর্যন্ত পড়ে, শুগ্ম প্রশস্ত
 اهدنا الصراط المستقيم صراط الذين أنعمت عليهم غير المغضوب عليهم ولا الضالين
তখন আল্লাহ পাক বলেন: এসব আমার বান্দার জন্য এবং সে যা চায় তা সবই তার জন্য।
এজন্য মানুষের আভ্যন্তরীণ পরিবর্তনে নামাজ হল মূল চালিকা শক্তি। এজন্য নামাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহ পাকের সাথে মানুষের সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় ও মজবুত হয়। ইহকাল ও পরকালের মুক্তির পথ হয় সুগম ও সুপ্রশস্ত। সালাত ব্যক্তি, পরিবার, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি, শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ব ও মমতাবোধ উজ্জীবিত করে- গড়ে উঠে সামাজিক ঐক্য। নামাজ এমন এক এবাদত যার দ্বারা দিনে পাঁচ বার আল্লাহ পাকের সাথে বান্দার সম্পর্ক তৈরী হয়। মেরাজের রজনীতে আল্লাহ পাক নামাজ ফরজ করেন। প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়, তার পর আল্লাহ পাক মানুষের প্রতি দয়া করে পাঁচ ওয়াক্তে নিয়ে আসেন। তবে আজর ও সওয়াব পঞ্চাশ ওয়াক্তের-ই চালু রাখেন। সুতরাং নামাজী বাক্তি বাহ্যিক ভাবে পাঁচ ওয়াক্ত পড়লেও প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ পাক তাকে পঞ্চাশ ওয়াক্তেরই সওয়াব প্রদান করেন। নামাজ এমন এক এবাদত যা আল্লাহ পাক সাত আসমানের উপরেই ফরজ করাকে শ্রেয় মনে করেছেন।
মেরাজের রজনীতে আল্লাহ পাক কোন প্রকার মাধ্যম ছাড়াই নামাজের হুকুম প্রদান করেন। এতে সালাতের অপরিসীম গুরুত্ব ও ফজীরলতেরই প্রতিফলন ঘটেছে। আল্লাহ পাকের একত্ববাদ ও রেসালাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের পর গুরুত্বপূর্ণ রুকন হচ্ছে নামাজ। হাদীস শরীফে আল্লার নবী বলেন:
بني الإسلام على خمس، شهادة أن لا إله إلا الله، وأن محمداً رسول الله، وإقام الصلاة، وإيتاء الزكاة، و صوم رمضان، وحج البيت. رواه البخاري  و مسلم
অর্থাৎ, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি : ১- এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্যিকার ইলাহ নেই এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ পাকের রাসূল। ২-নামাজ কায়েম করা। ৩-জাকাত প্রদান করা। ৪-রমজানের রোজা রাখা। ৫-বাইতুল্লাহর হজ্ব করা। (বোখারি ও  মুসলিম )
 রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন -
رأس الأمر الإسلام، وعموده الصلاة، و ذروة سنامه الجهاد.رواه الترمذي
অর্থাৎ,সবকিছুর মূল হল ইসলাম, আর ইসলামের খুঁটি নামাজ, আর ইসলামের শীর্ষ পীঠ হল জিহাদ। (তিরমিযি শরীফ)
নামাজ হচ্ছে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও সর্বোত্তম আমল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
استقيموا ولن تحصوا، واعلموا أن خير أعمالكم الصلاة، ولن يحافظ على الوضوء إلا مؤمن. رواه ابن ماجة
তোমরা অটুট ও অবিচল থাক, গণনা করো না, আর মনে রাখবে তোমাদের সর্বোত্তম আমল হল নামাজ, একজন মোমিন অবশ্যই সর্বদা ওজু সংরক্ষণ করতে থাকে। (ইবনে মাজাহ)
নামাজ হল নূর- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
الطهور شطر الإيمان، والحمد لله تملأ الميزان، وسبحان الله والحمد لله تملان أو تملأ ما بين السماء والأرض، والصلاة نور، والصدقة برهان، والصبر ضياء، والقرآن حجة لك أو عليك. رواه مسلم
অর্থাৎ,পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক আর আলহামদুলিল্লাহ মিযানের পাল্লাকে সম্পূর্ণ করে, সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে নেকির দ্বারা পূর্ণ করে। সালাত নূর বা আলো। দান খয়রাত ক্বিয়ামতের দিন মুমিনের দলীল হিসাবে প্রকাশ পাবে, ধৈর্য প্রকাশ পাবে উজ্জলতা হিসাবে আর কোরআন হাজির হবে বান্দার পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষ্যদাতা  হিসাবে । (মুসলিম)
নামাজ হল আল্লাহ পাকের  নৈকট্য ও উচ্চ-মর্যাদা লাভের একমাত্র উপকরণ। হযরত সাওবান (রা:) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমন আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন যা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, তুমি বেশি করে আল্লাহ পাকের জন্য সেজদা(নামাজ) আদায় করতে থাক, কারণ তোমার প্রতিটি সেজদার কারণে আল্লাহ পাক তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার গুনাহ মাপ করবেন। (মুসলিম )
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন :
أقرب ما يكون العبد من ربه وهو ساجد، فأكثروا الدعاء. رواه مسلم
বান্দা আল্লাহ পাকের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় ঐ সময়ে যখন সে সেজদারত থাকে। সুতরাং তোমরা সেজদার অবস্থায় বেশি বেশি প্রার্থনা কর। (মুসলিম)
ক্বিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বান্দার নামাজের  হিসাব নেয়া হবে। তাতে হয় সে মুক্তি পাবে অথবা ধ্বংস হবে। জনাব রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
أول ما يحاسب به العبد يوم القيامة الصلاة، فإن صلحت صلح سائرعمله، وإن فسدت فسد سائر عمله. رواه الترمذي
কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব হবে। যদি নামাজ ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি নামাজ বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। (তিরমিযি)
যাদের নামাজ ঠিক হয়ে যায় তাদের অন্যান্য সমস্ত এবাদত ও কর্মও ঠিক হয়েযায়।
হযরত উমার (র.) খলীফাতুল মুসলিমীন হওয়ার পর তার গভর্নরদের প্রতি একটি নির্দেশ নামা পঠিয়েছিলেন তাতে লেখা ছিল “আমার নিকট তোমাদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে নামাজ। বিধায় যারা নিজ নামাজের ক্ষেত্রে নিষ্ঠাবান ও যতœবান হবে তারা দ্বীন-ধর্মের  হেফাজতকারী বলে গণ্যহবে। আর যারা নিজেদের নামাজ নষ্ট করবে, তারা তদের আন্যান্য সৎকর্মকে সর্বাধিক বিনষ্টকারী বলে গণ্য হবে।”
 রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন
 رواه أحمد. العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة، فمن تركها فقد كفر
আর্থাৎ, আমাদের ও তাদের (মুনাফেকদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা হচ্ছে নামাজ আদায় করা, সুতরাং যে নামাজ ত্যাগ করবে সে (প্রকাশ্যে) কাফের হয়ে যাবে।
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন। আমরা যে মুনাফেকদের জান-মালের নিরাপত্তা দিয়েছি তা এই জন্য যে, তারা আমাদের ন্যায় নামাজ পড়বে ও জামাতে আসবে। অন্যথায় তাদের ঈমানকে তো আমরা দেখিনা। বিধায় যারা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবাদত নামাজ ত্যাগ করলো তারা তাদের কুফুরীকে প্রকাশ করে দিল। এজন্য প্রতিটি মুসলমানের এ ব্যপারে সতর্ক হওয়া দরকার যে, তারা যেন নামাজ ত্যাগের মাধ্যমে নিজেদের কুফুরিকে প্রকাশ না করে।
অন্য বর্ণনায় এসেছে- নামাজ ত্যাগের দ্বারা বান্দা ও কুফুরের মধ্যেকার প্রাচীর ভেঙ্গে যায়। ব্যাখ্যা ঃ মুমিন ও কুফুরীর মধ্যে নামাজ হল প্রাচীরের ন্যায়, এ প্রাচীরের (নামাজের) কারণে বান্দা কুফুরীর সীমানায় প্রবেশ করতে পারেনা। আর যখন নামাজ ত্যাগ করে তখন তার এ প্রাচীর ভেঙ্গে যায়, তখন সে কুফুরীর সীমানায় ডুকে যায়, বিধায় নামাজ ত্যাগের দ্বারা সে কুফুরী পর্যন্ত পৌছে যায়।

নামাজের ফায়দা ও উপকারিতা

নামাজ হল মুমিনের পাপ মোচনকারী এবং ছোট ছোট গুনাহের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
الصلوات الخمس والجمعة إلى الجمعة كفارات لما بينهن. رواه مسلم
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং এক জুমা হতে আরেক জুমা উভয়ই তার  মধ্যবর্তী গুনাহ সমূহের জন্য কাফ্ফারা স্বরুপ , যতক্ষণ পর্যন্ত নামাজী ব্যক্তি কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হয়। (মুসলিম) 
এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের দ্বারা পাপমোচনের একটি উদাহরণ এভাবে প্রদান করেছেন :
أرأيتم لوأن نهراً بباب أحدكم، يغتسل فيه كل يوم خمس مرات، هل يبقى من درنه شيء ؟ قالوا لا يبقى من درنه شيء، قال فكذلك مثل الصلوات الخمس، يمحو الله بهن الخطايا. رواه مسلم
যদি তোমাদের কারো বাড়ির দরজায় একটি নদী থাকে আর তাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কি কোন ময়লা আবর্জনা অবশিষ্ট থাকে? সাহাবিরা উত্তরে বললেন, না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্ত এমনি। দিনে পাঁচবার নামাজ  আদায় করার দ্বারা আল্লাহ পাক বান্দার গুনাহ গুলিকে ধুয়ে মুছে ফেলেন। (মুসলিম)

জনাব রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন:
إن العبد المسلم ليصلي الصلاة يريد بها وجه الله، فتهافت عنه ذنوبه، كما يتهافت هذا الورق عن هذه الشجرة. رواه أحمد
অর্থাৎ,মুসলিম বান্দা যখন একমাত্র আল্লাহ পাকের  সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করে তখন তার গুনাহ এমনভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেমন এই বৃক্ষের পাতা ঝরে পড়ে। (আহমদ )

পরিবারবর্গ ও সম্পর্কশীলদের নামাজের আদেশ ও তার রহস্যঃ
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقاً نَّحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى (ত্বোয়া-হা
;১৩৩) অর্থাৎ, আপনি পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ দিন  এবং নিজেও এর উপর অবিচল থাকুন। বাহ্যতঃ এখানে আলাদা আলাদা দুটি নির্দেশ রয়েছে। (ক) পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ এবং(খ) নিজেও নামাজ অব্যাহত রাখা । কিন্তু চিন্তা করলে দেখা যায় যে, নিজের নামাজ পুরোপুরি অব্যাহত রাখার জন্যেও আপনার পরিবেশ, পরিবারবর্গ ও স্বজনদের নিয়মিত হওয়া আবশ্যক। কেননা পরিবেশ ভিন্নরূপ হলে মানুষ স্বভাবত নিজেও অলসতার শিকার হয়ে যায়।স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও সম্পর্কীয় সবাই ‘আহলের’ অন্তর্ভুক্ত। এদের দ্বারা মানুষের পরিবেশ ও সমাজ গঠিত হয়। এ আয়াত অবতীর্ণ হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যহ ফজরের নামাজের সময় হযরত আলী ও ফতেমা (রাঃ)-এর গৃহে গমন করে  الصَّلَاةَ الصَّلَاةَ (নামাজ পড়, নামাজ পড়)বলতেন। মাআরেফুল কোরআন । ধনকুবের ও রাজারাজড়াদের ধনৈশ্বর্য ও জাঁকজমকের উপর যখনই  হযরত ওরওয়া ইবনে যোবায়েরের দৃষ্টি পড়ত , তখনই তিনি নিজ গৃহে ফিরে আসতেন এবং পরিবারবর্গকে নামাজ পড়ার কথা বলতেন।অতঃপর আলোচ্য আয়াত পাঠ করে শোনতেন। হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) যখন রাত্রিকালে তাহাজ্জুদের জন্য জাগ্রত হতেন, তখন পরিবারবর্গকেও জাগ্রত করে দিতেন।এবং এই আয়াত পাঠ করে শোনাতেন। 
যে ব্যক্তি নামাজ ও এবাদতে আত্মনিয়োগ করে , আল্লাহ পাক তার রিযিকের ব্যপার সহজ করে দেন।
لَا نَسْأَلُكَ رِزْقاً - অর্থাৎ, আমি আপনার কাছে এই দাবী করি না যে, আপনি নিজের ও পরিবারবর্গের রিযিক নিজস্ব জ্ঞান-গরিমা ও কর্মের জোরে সৃষ্টি করুন। বরং এ কাজটি আমি আমার নিজের দায়িত্ব রেখেছি।কেননা, রিযিক উপার্জন করা প্রকৃতপক্ষে মানুষের সাধ্যাতীত ব্যাপার। সে বেশীর মধ্যে মাটিকে নরম ও চাষোপযোগী করতে পারে এবং তাতে বীজ নিক্ষেপ করতে পারে।, কিন্তু বিজের ভেরত থেকে অঙ্কুর উৎপন্ন করা এবং তাকে ফলে-ফুলে সুশোভিত করার মধ্যে মানুষের কোন হাত নেই। এটা সরাসরি আল্লাহ পাকের কাম।বৃক্ষ গজানোর পরও মানুষের সকল প্রচেষ্টা তার হেফাজত ও আল্লাহ কর্তিক সৃজিত ফল-ফুল দ্বারা উপকৃত হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের এবাদতে মশগুল হয়ে যায়, আল্লাহ পাক এই পরিশ্রমের বোঝাও তার জন্য সহজ ও হালকা করে দেন।  
নামাজের ফায়দা ও উপকারিতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক নিজ ভাষায় এভাবে  ঘোষণা দেন,
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَر. العنكبوت
নিশ্চয় নামাজ (নামাজীকে) অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আল-আনকাবুত; ৪৬
নামাজ,মানন সংশোধনের পূর্ণ ব্যবস্থাপত্র
অন্যায় ও অপরাধ দমনের অভিনব পদ্ধতি অবিস্কার হয়ে আসছে যুগযুগ ধরে।যখনই যেখানে দুষ্কৃতকারীরা অন্যায় ও অপরাধে লিপ্ত হয়েছে তখনই তাদের দমন করার জন্য কালের কর্ণধারেরা প্রণয়ন করে ছিলো নতুন নতুন ধারার আইন। আবশ্য তাদের এ প্রচেষ্টার ফল তারা সাময়িক ভাবে পেয়ে ছিলো কিন্তু স্থায়ী ভাবে এ সমস্যসার সমাধান তারা খুঁজে পায়নি এবং কস্মিনকালেও তা সম্ভব না, ইতিহাস তার জলন্ত প্রমাণ। বর্তামান বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রে নিরলস ভাবে এ প্রচেষ্টাই চালানো হচ্ছে যে, রাষ্ট্রে কি করে শান্তি,শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং অন্যায় অপরাধ দূর হবে। কিন হচ্ছে তার উল্টটা مرض بڑھتا گیا جوں جوں دواکا নতুন নতুন ঔষধ যেমন আস্কিার হচ্ছে তেমনি রোগ ও বেড়েই চলেছে।বর্তমানে অন্যায় ও অপরাধ দমনে দেশী ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণ করা হচ্ছে নানা ব্যবস্থা কিন্তু তাদের এ চেষ্টা ফল প্রসূ হচ্ছেনা। আধুনিক বিজ্ঞান তার সর্বশেষ প্রচেষ্টা ব্যয় করছে এর পিছে এবং অন্যায় ও অপরাধ দমনে উপহার দিয়েছে বিশ্ব বাসীকে অত্যাধুনিক যন্ত্র সাথে সাথে গড়ে উঠেছে দেশে দেশে দক্ষ বাহিনী কিন্তু কই! অন্যায় ও অপরাধ কি আদৌ দমন হচ্ছে? উত্তরোত্তর তো বেড়েই চলেছে । ব্যর্থতা ছাড়া সফলতার ছায়াও তার পর্স্প করতে পারেনি।এ অবস্থা অবলকন করার জন্য বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের প্রতি একটু নজর বুলান। পক্ষান্তরে মানব ও মানবতার এ জটিল সমাস্যার স্থায়ী সমাধান দিয়েছে আল-কোরআন এরশাদ হচ্ছে 
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَر. العنكبوت
নিশ্চয় নামাজ (নামাজীকে) অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আল-আনকাবুত; ৪৬
আয়াতে ব্যবহৃত الْفَحْشَاء   শব্দের অর্থ এমন সুস্পষ্ট মন্দ কাজ যাকে মোমেন ও কাফের বির্বিশেষে প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তিই মন্দ মনে করে; যেনম ব্যভিচার,অন্যায়, হত্যা,চুরি ডাকাতি ইত্যাদি।পক্ষান্তরে الْمُنْكَر এমন কাজকে বলা হয়, যার হারাম ও অবৈধ হওয়ার ব্যপারে শরীয়ত বিশারদগণ একমত। এক কথায় الْفَحْشَاء   ও الْمُنْكَر শব্দদ্বয়ের মধ্যে যাবতীয় অপরাধ  এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গোনাহ দাখিল হয়ে গেছে। যেগুলো  নিঃসন্দেহরূপে  সৎকর্মের পথে সর্ববৃহৎ বাধা। গভীর ভাবে লক্ষ করলে আমরা বুঝতে পারবো যে মানব রচিত বিধান দ্বারা শুধু সাময়ীক প্রকাশ্যে যে সমস্ত অন্যায় ও অপরাধ সংঘটিত হয় তা দমন করা সম্ভব কিন্তু অপ্রকাশ্যে এবং রাতের অন্ধকারে যে সমস্ত অপরাধ সংঘটিত হয় তা কোন বাহিনী বা মানব রচিত বিধান দ্বারা দমন করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। তবে হাঁ যে সমস্ত অপরাধ মানষের অগচরে-গুপনে,রাতের অন্ধকারে যার কোন খবর পৃথিবীর কেউ রাখতে পারেনা এমন অপরাধ দমনের গ্যারান্টি দিচ্ছে একমাত্র নামাজ। কারণ নামাজে দন্ডয়মান হওয়ার কারণে মানব মনে আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহাত্মের যে উপলদ্ধি আসে তা অন্যায় অশ্লীল কাজ থেকে মানুষকে অবশ্যই বিরত রাখে। তত্ত্বজ্ঞানীগণ বলেছেন, নামাজের কারণে মানব মনে আল্লাহ পাকরে ভয়ের উদ্রেক হয় আর তা মানুষকে পাপাচার থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের মহান দরবারে নামাজের মাধ্যমে হাযির হয়, নিজের দীনতা-হীনতা স্বীকার করে এবং বিনয় প্রকাশ করে, জীবনের কৃত অন্যায়ের জন্যে ক্ষমা প্রার্থী  হয়  এবং আল্লাহ পাকের আযাবের ভয়ে ভীত –সন্ত্রস্ত  হয়, তার পক্ষে নামাজের পর পুনরায়  পাপাচারে লিপ্ত হওয়া কি করে সম্ভব হতে পারে! নামাজী ব্যাক্তি যখন দরবারে এলাহীতে হাযির হয়, তার প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহ পাকের অনুগত্য প্রকাশ করে, তার অন্তর সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাকের ভয়ে কম্পমান থাকে, সে প্রথমে দন্ডয়মান অবস্থায়, পরে রুকু অবস্থায়,অবশেষে সেজদারত হয়ে আল্লাহ পাকের দরবারে মিনতি প্রকাশ করে, এরপর তার পক্ষে অন্যায়-অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়া সম্পূর্ণ অকল্পনীয়। এখানে একটা কথা  বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, নামাজ রুকু ,সেজদা ,আরকান আহকাম যথা নিয়মে হতে হবে। আল্লামা বগভী রহ. হযরত আনাস র. বর্ণিত হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে ছেন।তিনি বর্ণনা করেছেন, একজন আনছারী যুবক হযরত রসূলে করীম স. সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন।কিন্তু এতদসত্ত্বেও সে বিভিন্ন প্রকার পাপাচারে লিপ্ত  হতো তার এ অবস্থা সর্ম্পে প্রিয়নবী স. কে অবহিত করা হয়। তখন তিনি এরশাদ করেন, তার নামাজ তাকে একদিন এসব গুনাহ থেকে বিরত করবে। কিছুদিন পর তাই হলো । সে তওবা করে ফেললো এবং তার অবস্থ ঠিক হয়ে গেল। আধুনিক ব্যাখ্যাকারগণ এর একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বসন্ত-কলেরার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষে  যেভাবে টীকা বা ইনজেকশন দিয়ে থাকেন এবং তার দ্বারা উপকারও হয়, ঠিক তেমনি অন্যায়-অশ্লীলতা এক কথায় পাপের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে নামাজ প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।যেভাবে যথা নিয়মে নামাজ ঔষধ সেবন, ইনজেকশন গ্রহণ রোগ নিরাময়ের জন্য বা রোগ আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্যে জরুরী মনে করা হয়,  ঠিক তেমনি যথা নিয়মে নামাজ আদায়ের মাধ্যমেও মানব মন পাপাচার থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে পারে। নামাজে আন্তরিকতা, মনের একাগ্রতা ,আল্লাহ পাকের ভয়, তাঁর রহমতের আশা, আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠত্বের উপলদ্ধি যত অধিক পরিমাণে হবে , নামাজ তত বেশী পাপাচার থেকে বিরত রাখতে সফল হবে। একজন নামাজী ব্যক্তি নামাজের যাবতীয় কল্যান ওই সময় পাবে যখন সে “اقامت صلوٰة  ”করবে। কোরআন কারীমে যতবার নামাজের তাগীদ দেওয়া হয়েছে সাধারণত “اقامت صلوٰة ” শব্দের মাধ্যমেই দেওয়া হয়েছে। নামাজ পড়ার কথা শুধু দু’এক জায়গায় বলাহয়েছে।এজন্য “ اقامت صلوٰة ”( নামাজ প্রতিষ্ঠা)-এর মর্ম অনুধাবন করা উচিত । اقامت-এর শাব্দিক অর্থ সোজাকরা, স্থায়ী রাখা। সাধারণত যেসব খুঁটি দেওয়াল বা গাছ প্রভৃতির আশ্রয়ে সোজাভাবে দাঁড়ানো থাকে , সে গুলো স্থায়ী থাকে এবং পড়ে যাওয়ার আশংকা কম থাকে। এজন্য স্থায়ী ও স্থিতিশীলকরণ অর্থেও ব্যবহার হয়।কোরআন সুন্নাহ্র পরিভাষায় “اقامت صلوٰة ” অর্থ নির্ধারিত সময় অনুসারে যাবতীয় শর্ত ও নিয়ম রক্ষা করে নামাজ আদায় করা। শুধু নামাজ পড়াকে “اقامت صلوٰة ”  বলা হয়না। নামাজের যত গুণাবলী , ফলাফল , লাভ ও বরকতের কথা কোরআন হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে তা সবই “اقامت صلوٰة  ” ( নামাজ প্রতিষ্ঠা)-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। এ জন্য প্রতিটি নামাজী ব্যক্তির জন্য এই সমস্ত বিষয়ের পূর্ণ জ্ঞান রাখা দরকার যা তার নামাজ প্রতিষ্ঠা করতে লাগে, তা না হলে সে নামাজের কল্যাণ, ও বরকত হতে মাহরুম হবে। তাই এখন নামাজের গুরুত্বপূর্ণ মাসেয়েল নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
নামাজ আরম্ভ করার পুর্বে যে সমস্ত কাজ অবশ্য কর্তব্য।
১। শরীর পাক হওয়া।
২। কাপড় পাক হওয়া।
৩। নামাজের জায়গা পাক হওয়া।
৪। ছতর ঢাকা।
৫। ক্বেবলা মুখি হওয়া।
৬। নিয়ত করা।
৭। নামাজের ওয়াক্ত হওয়া।
নামাজের পূর্বেই নামাজীকে আবশ্যই ছোট নাপাক ও বড় নাপাক থেকে শরীর পাক করে নিতে হবে। বড় নাপকা থেকে শরীর পাক করার একমাত্র উপায় হল গুসল করা।
এবার আসুন জেনে নেই গুসল ফরজ হয় কখন।
১। খাহেসের সাথে, উত্তেজনার সাথে বীর্য ক্ষরণ হলে, বীর্য বের হলে গুসল ফরজ হয়, চাই পুরুষের হোক বা মহিলার, ঘুমন্ত অবস্থায় হোক বা জাগ্রত অবস্থায়।
 ২। সহবাসে দ্বারা চাই নিজ স্ত্রীর সাথে হোক বা অবৈধ পন্থায় হোক বীর্যর্  বের হোক অথবা না হোক।
নারীর নির্ধারীত গুসল
 ৩।যখন ঋতু¯্রাবের রক্তপাত শেষ হয়ে যাবে, তখন নারীকে নামাজ বা যে কাজ গুলির জন্য পবিত্র থাকা আবশ্যক সে গুলি আঞ্জাম দেয়ার জন্য তার গুসল করা ফরজ।
রক্তপাত ৩ দিনের কম হবেনা, অতএব যদি তিন দিনের আগে শেষ হয়ে যায়, তবে তা ঋতু¯্রাবের রক্ত নয় বরং এটা এসতেহাযার রক্ত।
এবং দশ দিনের বেশিও থাকবেনা, অতএব যদি দশ দিনের বেশি থাকে তাহলে দশ দিনের পর থেকে সে গুলো এসতেহাযার রক্ত বলে গণ্য হবে। 
খ) - রক্তপাত ৩ দনিরে কম হবে না, অতএব যদি তনি দনিরে আগে শষে হয়ে যায়, তবে তা ঋতুস্রাবরে রক্ত নয়।
গ) - রক্তপাত দশ দনিরে বশেি থাকবে না, অতএব যদি দশ দনিরে বশেি থাকে তাহলে দশ দনি পর থকেে ঋতুস্রাবরে রক্ত নয় বরং তা এসতহোযার রক্ত বলে পরগিণতি হব।ে
নামাজ আরম্ভ করবিার র্পূবে যে সমস্ত কাজ অবশ্য র্কতব্য, তাহাকে নামাযরে র্শত বলে । ইহা আটট;ি যথা :-
১) শরীর পাক-পবত্রি করয়িা লওয়া, র্অথাৎ অযু কংিবা গোসলরে প্রয়োজন হইলে তাহা আদায় করয়িা লইতে হইবে ।
২) পোষাক পাক হওয়া । যদি কাপড়ে কোন নাপাক বস্তু নাগয়িা থাকে তাহা ধুইয়া পাক করয়িা লইবে অথবা উহা পরর্বিতন করয়িা পাক-পবত্রি কাপড় পরধিান করয়িা লইতে হইবে ।
৩) স্থান পাক হওয়া -র্অথাৎ যে স্থানে দাঁড়াইয়া নামায পড়বি,ে তাহা পাবত্রি হওয়া ।
৪) ছতর ঢাকয়িা লওয়া – র্অথাৎ নামায পড়বিার সময়ে পুরুষরে নাভী হইতে ও স্ত্রীলোক হইলে মুখ, হাতরে কব্জা ও পায়রে তলা ব্যতীত সমুদয় শরীর ঢাকয়িা লওয়া কন্তিু বাদী হইলে পটে, পঠি, র্পাশ্ব ও নাভী হইতে জানুর নীচ পযন্ত কাপড় দ্বারা ঢাকয়িা লওয়া ফরয ।
৫) কাবা শরীফরে দকি মুখ করয়িা দাঁড়ান ।
৬) নর্দিষ্টি ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা । নয়িত করা-যে ওয়াক্তরে নামায পড়বি,ে তাহার নয়িত করা ।
৭) তাকবীরে তাহরীমা বলা । র্অথৎ নামাজরে নয়িত করয়িা “আল্লাহু আকবার” বলয়িা নামায আরম্ভ করা।
নামাযরে রোকনসমূহ


      



















অনন্য এবাদত নামায

রচানায়

আব্দুল আহাদ
গুরুদাসপুর,নাটোর

মহান আল্লাহ পাক মানব ও দানব সৃষ্টির রহস্যের সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন, ঐশীগ্রন্থ আল-কুরআনে। তিনি এরশাদ করেছেন, 
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ-
 অর্থ: আর আমি জ্বীন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এজন্য যেন তারা শুধু আমারই বন্দেগী করে।( সূরা যারিয়াত; ৫৬) 
 এ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান হয়যে, মানব ও জ্বীন জাতির সৃষ্টির রহস্য হল, ¯্রষ্ট্রা ও পালনকর্তা আল্লাহ পাকের বন্দেগী করা, আর এবন্দেগীর মাধ্যমেই মানবতার উৎকর্ষ সাধন সম্ভব। মানব জতিকে পৃথিবীতে যেহেতু আল্লাহ পাক তাঁর প্রতিনিধি রূপে প্রেরণ করেছেন, তাই মহান আল্লাহ পাক সমগ্র সৃষ্টি জগৎকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করে রেখেছেন, পবিত্র কোরআনেই রয়েছে এর ঘোষণা :
هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا-
তিনিই সেই আল্লাহ পাক, যিনি তোমাদের উপকারার্থে সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর সব কিছু।   (আল-বাক্বারা ২৯)
 আল্লাহ পাক মানুষের রিযিকের যাবতীয় ব্যবস্থা জমীনের অভ্যন্তরে রেখে দিয়েছেন। যে যখনই যথা নিয়মে জমীনের উপর মেহনত করে, আল্লাহ পাক তার কাম্য বস্তু দান করেন, আর এ উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক বন্দার জন্যে আসমান থেকে বারি বর্ষণ করেন, চন্দ্র-সুর্য দ্বারা আলো বিতরণ করেন,বীজ থেকে অঙ্কুেরাদগম করেন, ক্রমে ক্রমে তা হতে নানান জাতের শষ্য ও ফলমূলের ব্যাপক সমারহ করেন। তাই বান্দার কর্তব্য হলো, আল্লাহ পাকের অনন্ত-অসীম নেয়ামত ভোগ করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তাঁর বন্দেগী করা। এপর্যায়ে প্রথম কর্তব্য হলো আল্লাহ পাকের তৌহীদ বা একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করা, শিরক বর্জন করা এবং আল্লাহ পাকের যাবতীয় বিধি-নিষেধ পালন করা। এখানে একথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে , আল্লাহ পাকের বন্দেগী শুধু কয়েকটি নিদিষ্ট এবাদতের মধ্যেই সীমিত নয়; বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রে মানুষের যাবতীয় কর্মকান্ড যথা পানাহার, আয়-রোজগার, বিয়ে-শাদী এক কথায় সব কিছু হতে হবে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তাঁর পছন্দনীয় তরীকায়। আল্লাহ পাক কোরআনে কারীমে এসত্যটিকে এভাবে ঘোষণা করেছেন:
قُلْ إنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
(হে রসূল!) আপনি ঘোষনা করুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহই জন্যে।
মরমী কবি তাই বলেছেন
نوشيدنش تابع حق را ديدنش نا ديدنش দ্ধ خوردنش خوابيدنش
বান্দার দেখা না দেখা সব কিছুর মধ্যেই থাকতে হবে আল্লাহ পাকের তাবেদারী,তার পানাহারে মাঝে এমনকি নিদ্রগমনেও।
قرب حق از هرعمل مقصود دار দ্ধ  تازتوگردد جلالش آشكار
প্রত্যেকটি কাজের উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভ,আর শুধু এভাবেই তোমার দ্বারা আল্লাহ পাকের কুদরতের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। এক কথায় মানুষের দুনিয়াবী জীবনে একমাত্র লক্ষ্য হবে আল্লাহ পাকের এবাদত। আর যাবতীয় এবাদতের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবাদত হল নামাজ। আমরা জানি যে ইসলাম ধর্ম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। নামাজ তার মধ্যে অন্যতম এবং এবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই পবিত্র কুরআনে ৮২ জায়গায় নামাজ কায়েম করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। ইসলামে সালাতের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি আল্লাহ পাকের রহমত এবং ইহ-পরোকালের মুক্তিলাভের প্রধান প্রধান অবলম্বন হিসাবে নামাজ বিশেষ তাৎপর্যবহ।
নামজের  গুরুত্ব ও তাৎপর্য   
নামাজের মাধ্যমে একজন মানুষ আল্লাহ পাকের সাথে দেয়া প্রতিশ্রুতির বার বার প্রতিফলন ঘটায়। সে তার প্রভু বা ¯্রষ্টাকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে, সে তার প্রতিশ্রুতি পালন করে যাচ্ছে। এ নামাজের মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভ করে। স্বর্গীয় প্রেমের ভুবনে নামাজ হল অতুলনীয়। এর মাধ্যমে সরাসরি ভাবে আল্লাহ পাকের সাথে বান্দার সম্পর্ক স্থাপন হয়। যেমন হাদীস শরীফে রসূলুল্লাহ স. বলেন যে, আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন:“ আমি নামাজ কে আমার এবং আমার বান্দার মাঝে অর্ধ অর্ধ করে ভাগ করেছি এবং আমার বান্দা আমার কাছে যা চায় তা আমি তাকে দিয়ে থাকি। যখন বান্দা বলে الحمد لله رب العالمين ,তখন আল্লাহ পাক বলেন: আমার বান্দা আমার প্রশংসা করলো। বান্দা যখন বলে,  الرحمن الرحيمতখন আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা আমার গুণাগুণ বর্ণনা করলো
। বান্দা যখন বলে, مالك يوم الدين তখন আল্লাহ পাক বলেন: আমার বান্দা আমার মহাত্ম্য বর্ণনা করলো। কোন কোন বর্ণনায় আছে যে আল্লাহ পাক উত্তরে বলেন:  فوض الي عبدي অর্থাৎ, বান্দা আমার উপর (সবকিছু)সমর্পণ করলো।অতঃপর, যখন বান্দা বলে,
  إياك نعبد وإياك نستعين তখন আল্লাহ পাক বলেন: এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যেকার কথা, এবং আমার বান্দা আমার কাছে যা চাইবে আমি তাকে তাই দেবো। অতঃপর বান্দা যখন শেষ পর্যন্ত পড়ে, শুগ্ম প্রশস্ত
 اهدنا الصراط المستقيم صراط الذين أنعمت عليهم غير المغضوب عليهم ولا الضالين
তখন আল্লাহ পাক বলেন: এসব আমার বান্দার জন্য এবং সে যা চায় তা সবই তার জন্য।
এজন্য মানুষের আভ্যন্তরীণ পরিবর্তনে নামাজ হল মূল চালিকা শক্তি। এজন্য নামাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহ পাকের সাথে মানুষের সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় ও মজবুত হয়। ইহকাল ও পরকালের মুক্তির পথ হয় সুগম ও সুপ্রশস্ত। সালাত ব্যক্তি, পরিবার, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি, শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ব ও মমতাবোধ উজ্জীবিত করে- গড়ে উঠে সামাজিক ঐক্য। নামাজ এমন এক এবাদত যার দ্বারা দিনে পাঁচ বার আল্লাহ পাকের সাথে বান্দার সম্পর্ক তৈরী হয়। মেরাজের রজনীতে আল্লাহ পাক নামাজ ফরজ করেন। প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়, তার পর আল্লাহ পাক মানুষের প্রতি দয়া করে পাঁচ ওয়াক্তে নিয়ে আসেন। তবে আজর ও সওয়াব পঞ্চাশ ওয়াক্তের-ই চালু রাখেন। সুতরাং নামাজী বাক্তি বাহ্যিক ভাবে পাঁচ ওয়াক্ত পড়লেও প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ পাক তাকে পঞ্চাশ ওয়াক্তেরই সওয়াব প্রদান করেন। নামাজ এমন এক এবাদত যা আল্লাহ পাক সাত আসমানের উপরেই ফরজ করাকে শ্রেয় মনে করেছেন।
মেরাজের রজনীতে আল্লাহ পাক কোন প্রকার মাধ্যম ছাড়াই নামাজের হুকুম প্রদান করেন। এতে সালাতের অপরিসীম গুরুত্ব ও ফজীরলতেরই প্রতিফলন ঘটেছে। আল্লাহ পাকের একত্ববাদ ও রেসালাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের পর গুরুত্বপূর্ণ রুকন হচ্ছে নামাজ। হাদীস শরীফে আল্লার নবী বলেন:
بني الإسلام على خمس، شهادة أن لا إله إلا الله، وأن محمداً رسول الله، وإقام الصلاة، وإيتاء الزكاة، و صوم رمضان، وحج البيت. رواه البخاري  و مسلم
অর্থাৎ, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি : ১- এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্যিকার ইলাহ নেই এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ পাকের রাসূল। ২-নামাজ কায়েম করা। ৩-জাকাত প্রদান করা। ৪-রমজানের রোজা রাখা। ৫-বাইতুল্লাহর হজ্ব করা। (বোখারি ও  মুসলিম )
 রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন -
رأس الأمر الإسلام، وعموده الصلاة، و ذروة سنامه الجهاد.رواه الترمذي
অর্থাৎ,সবকিছুর মূল হল ইসলাম, আর ইসলামের খুঁটি নামাজ, আর ইসলামের শীর্ষ পীঠ হল জিহাদ। (তিরমিযি শরীফ)
নামাজ হচ্ছে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও সর্বোত্তম আমল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
استقيموا ولن تحصوا، واعلموا أن خير أعمالكم الصلاة، ولن يحافظ على الوضوء إلا مؤمن. رواه ابن ماجة
তোমরা অটুট ও অবিচল থাক, গণনা করো না, আর মনে রাখবে তোমাদের সর্বোত্তম আমল হল নামাজ, একজন মোমিন অবশ্যই সর্বদা ওজু সংরক্ষণ করতে থাকে। (ইবনে মাজাহ)
নামাজ হল নূর- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
الطهور شطر الإيمان، والحمد لله تملأ الميزان، وسبحان الله والحمد لله تملان أو تملأ ما بين السماء والأرض، والصلاة نور، والصدقة برهان، والصبر ضياء، والقرآن حجة لك أو عليك. رواه مسلم
অর্থাৎ,পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক আর আলহামদুলিল্লাহ মিযানের পাল্লাকে সম্পূর্ণ করে, সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে নেকির দ্বারা পূর্ণ করে। সালাত নূর বা আলো। দান খয়রাত ক্বিয়ামতের দিন মুমিনের দলীল হিসাবে প্রকাশ পাবে, ধৈর্য প্রকাশ পাবে উজ্জলতা হিসাবে আর কোরআন হাজির হবে বান্দার পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষ্যদাতা  হিসাবে । (মুসলিম)
নামাজ হল আল্লাহ পাকের  নৈকট্য ও উচ্চ-মর্যাদা লাভের একমাত্র উপকরণ। হযরত সাওবান (রা:) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমন আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন যা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, তুমি বেশি করে আল্লাহ পাকের জন্য সেজদা(নামাজ) আদায় করতে থাক, কারণ তোমার প্রতিটি সেজদার কারণে আল্লাহ পাক তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার গুনাহ মাপ করবেন। (মুসলিম )
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন :
أقرب ما يكون العبد من ربه وهو ساجد، فأكثروا الدعاء. رواه مسلم
বান্দা আল্লাহ পাকের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় ঐ সময়ে যখন সে সেজদারত থাকে। সুতরাং তোমরা সেজদার অবস্থায় বেশি বেশি প্রার্থনা কর। (মুসলিম)
ক্বিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বান্দার নামাজের  হিসাব নেয়া হবে। তাতে হয় সে মুক্তি পাবে অথবা ধ্বংস হবে। জনাব রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
أول ما يحاسب به العبد يوم القيامة الصلاة، فإن صلحت صلح سائرعمله، وإن فسدت فسد سائر عمله. رواه الترمذي
কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব হবে। যদি নামাজ ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি নামাজ বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। (তিরমিযি)
যাদের নামাজ ঠিক হয়ে যায় তাদের অন্যান্য সমস্ত এবাদত ও কর্মও ঠিক হয়েযায়।
হযরত উমার (র.) খলীফাতুল মুসলিমীন হওয়ার পর তার গভর্নরদের প্রতি একটি নির্দেশ নামা পঠিয়েছিলেন তাতে লেখা ছিল “আমার নিকট তোমাদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে নামাজ। বিধায় যারা নিজ নামাজের ক্ষেত্রে নিষ্ঠাবান ও যতœবান হবে তারা দ্বীন-ধর্মের  হেফাজতকারী বলে গণ্যহবে। আর যারা নিজেদের নামাজ নষ্ট করবে, তারা তদের আন্যান্য সৎকর্মকে সর্বাধিক বিনষ্টকারী বলে গণ্য হবে।”
 রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন
 رواه أحمد. العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة، فمن تركها فقد كفر
আর্থাৎ, আমাদের ও তাদের (মুনাফেকদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা হচ্ছে নামাজ আদায় করা, সুতরাং যে নামাজ ত্যাগ করবে সে (প্রকাশ্যে) কাফের হয়ে যাবে।
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন। আমরা যে মুনাফেকদের জান-মালের নিরাপত্তা দিয়েছি তা এই জন্য যে, তারা আমাদের ন্যায় নামাজ পড়বে ও জামাতে আসবে। অন্যথায় তাদের ঈমানকে তো আমরা দেখিনা। বিধায় যারা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবাদত নামাজ ত্যাগ করলো তারা তাদের কুফুরীকে প্রকাশ করে দিল। এজন্য প্রতিটি মুসলমানের এ ব্যপারে সতর্ক হওয়া দরকার যে, তারা যেন নামাজ ত্যাগের মাধ্যমে নিজেদের কুফুরিকে প্রকাশ না করে।
অন্য বর্ণনায় এসেছে- নামাজ ত্যাগের দ্বারা বান্দা ও কুফুরের মধ্যেকার প্রাচীর ভেঙ্গে যায়। ব্যাখ্যা ঃ মুমিন ও কুফুরীর মধ্যে নামাজ হল প্রাচীরের ন্যায়, এ প্রাচীরের (নামাজের) কারণে বান্দা কুফুরীর সীমানায় প্রবেশ করতে পারেনা। আর যখন নামাজ ত্যাগ করে তখন তার এ প্রাচীর ভেঙ্গে যায়, তখন সে কুফুরীর সীমানায় ডুকে যায়, বিধায় নামাজ ত্যাগের দ্বারা সে কুফুরী পর্যন্ত পৌছে যায়।

নামাজের ফায়দা ও উপকারিতা

নামাজ হল মুমিনের পাপ মোচনকারী এবং ছোট ছোট গুনাহের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
الصلوات الخمس والجمعة إلى الجمعة كفارات لما بينهن. رواه مسلم
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং এক জুমা হতে আরেক জুমা উভয়ই তার  মধ্যবর্তী গুনাহ সমূহের জন্য কাফ্ফারা স্বরুপ , যতক্ষণ পর্যন্ত নামাজী ব্যক্তি কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হয়। (মুসলিম) 
এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের দ্বারা পাপমোচনের একটি উদাহরণ এভাবে প্রদান করেছেন :
أرأيتم لوأن نهراً بباب أحدكم، يغتسل فيه كل يوم خمس مرات، هل يبقى من درنه شيء ؟ قالوا لا يبقى من درنه شيء، قال فكذلك مثل الصلوات الخمس، يمحو الله بهن الخطايا. رواه مسلم
যদি তোমাদের কারো বাড়ির দরজায় একটি নদী থাকে আর তাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কি কোন ময়লা আবর্জনা অবশিষ্ট থাকে? সাহাবিরা উত্তরে বললেন, না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্ত এমনি। দিনে পাঁচবার নামাজ  আদায় করার দ্বারা আল্লাহ পাক বান্দার গুনাহ গুলিকে ধুয়ে মুছে ফেলেন। (মুসলিম)

জনাব রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন:
إن العبد المسلم ليصلي الصلاة يريد بها وجه الله، فتهافت عنه ذنوبه، كما يتهافت هذا الورق عن هذه الشجرة. رواه أحمد
অর্থাৎ,মুসলিম বান্দা যখন একমাত্র আল্লাহ পাকের  সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করে তখন তার গুনাহ এমনভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেমন এই বৃক্ষের পাতা ঝরে পড়ে। (আহমদ )

পরিবারবর্গ ও সম্পর্কশীলদের নামাজের আদেশ ও তার রহস্যঃ
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقاً نَّحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى (ত্বোয়া-হা
;১৩৩) অর্থাৎ, আপনি পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ দিন  এবং নিজেও এর উপর অবিচল থাকুন। বাহ্যতঃ এখানে আলাদা আলাদা দুটি নির্দেশ রয়েছে। (ক) পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ এবং(খ) নিজেও নামাজ অব্যাহত রাখা । কিন্তু চিন্তা করলে দেখা যায় যে, নিজের নামাজ পুরোপুরি অব্যাহত রাখার জন্যেও আপনার পরিবেশ, পরিবারবর্গ ও স্বজনদের নিয়মিত হওয়া আবশ্যক। কেননা পরিবেশ ভিন্নরূপ হলে মানুষ স্বভাবত নিজেও অলসতার শিকার হয়ে যায়।স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও সম্পর্কীয় সবাই ‘আহলের’ অন্তর্ভুক্ত। এদের দ্বারা মানুষের পরিবেশ ও সমাজ গঠিত হয়। এ আয়াত অবতীর্ণ হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যহ ফজরের নামাজের সময় হযরত আলী ও ফতেমা (রাঃ)-এর গৃহে গমন করে  الصَّلَاةَ الصَّلَاةَ (নামাজ পড়, নামাজ পড়)বলতেন। মাআরেফুল কোরআন । ধনকুবের ও রাজারাজড়াদের ধনৈশ্বর্য ও জাঁকজমকের উপর যখনই  হযরত ওরওয়া ইবনে যোবায়েরের দৃষ্টি পড়ত , তখনই তিনি নিজ গৃহে ফিরে আসতেন এবং পরিবারবর্গকে নামাজ পড়ার কথা বলতেন।অতঃপর আলোচ্য আয়াত পাঠ করে শোনতেন। হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) যখন রাত্রিকালে তাহাজ্জুদের জন্য জাগ্রত হতেন, তখন পরিবারবর্গকেও জাগ্রত করে দিতেন।এবং এই আয়াত পাঠ করে শোনাতেন। 
যে ব্যক্তি নামাজ ও এবাদতে আত্মনিয়োগ করে , আল্লাহ পাক তার রিযিকের ব্যপার সহজ করে দেন।
لَا نَسْأَلُكَ رِزْقاً - অর্থাৎ, আমি আপনার কাছে এই দাবী করি না যে, আপনি নিজের ও পরিবারবর্গের রিযিক নিজস্ব জ্ঞান-গরিমা ও কর্মের জোরে সৃষ্টি করুন। বরং এ কাজটি আমি আমার নিজের দায়িত্ব রেখেছি।কেননা, রিযিক উপার্জন করা প্রকৃতপক্ষে মানুষের সাধ্যাতীত ব্যাপার। সে বেশীর মধ্যে মাটিকে নরম ও চাষোপযোগী করতে পারে এবং তাতে বীজ নিক্ষেপ করতে পারে।, কিন্তু বিজের ভেরত থেকে অঙ্কুর উৎপন্ন করা এবং তাকে ফলে-ফুলে সুশোভিত করার মধ্যে মানুষের কোন হাত নেই। এটা সরাসরি আল্লাহ পাকের কাম।বৃক্ষ গজানোর পরও মানুষের সকল প্রচেষ্টা তার হেফাজত ও আল্লাহ কর্তিক সৃজিত ফল-ফুল দ্বারা উপকৃত হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের এবাদতে মশগুল হয়ে যায়, আল্লাহ পাক এই পরিশ্রমের বোঝাও তার জন্য সহজ ও হালকা করে দেন।  
নামাজের ফায়দা ও উপকারিতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক নিজ ভাষায় এভাবে  ঘোষণা দেন,
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَر. العنكبوت
নিশ্চয় নামাজ (নামাজীকে) অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আল-আনকাবুত; ৪৬
নামাজ,মানন সংশোধনের পূর্ণ ব্যবস্থাপত্র
অন্যায় ও অপরাধ দমনের অভিনব পদ্ধতি অবিস্কার হয়ে আসছে যুগযুগ ধরে।যখনই যেখানে দুষ্কৃতকারীরা অন্যায় ও অপরাধে লিপ্ত হয়েছে তখনই তাদের দমন করার জন্য কালের কর্ণধারেরা প্রণয়ন করে ছিলো নতুন নতুন ধারার আইন। আবশ্য তাদের এ প্রচেষ্টার ফল তারা সাময়িক ভাবে পেয়ে ছিলো কিন্তু স্থায়ী ভাবে এ সমস্যসার সমাধান তারা খুঁজে পায়নি এবং কস্মিনকালেও তা সম্ভব না, ইতিহাস তার জলন্ত প্রমাণ। বর্তামান বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রে নিরলস ভাবে এ প্রচেষ্টাই চালানো হচ্ছে যে, রাষ্ট্রে কি করে শান্তি,শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং অন্যায় অপরাধ দূর হবে। কিন হচ্ছে তার উল্টটা مرض بڑھتا گیا جوں جوں دواکا নতুন নতুন ঔষধ যেমন আস্কিার হচ্ছে তেমনি রোগ ও বেড়েই চলেছে।বর্তমানে অন্যায় ও অপরাধ দমনে দেশী ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণ করা হচ্ছে নানা ব্যবস্থা কিন্তু তাদের এ চেষ্টা ফল প্রসূ হচ্ছেনা। আধুনিক বিজ্ঞান তার সর্বশেষ প্রচেষ্টা ব্যয় করছে এর পিছে এবং অন্যায় ও অপরাধ দমনে উপহার দিয়েছে বিশ্ব বাসীকে অত্যাধুনিক যন্ত্র সাথে সাথে গড়ে উঠেছে দেশে দেশে দক্ষ বাহিনী কিন্তু কই! অন্যায় ও অপরাধ কি আদৌ দমন হচ্ছে? উত্তরোত্তর তো বেড়েই চলেছে । ব্যর্থতা ছাড়া সফলতার ছায়াও তার পর্স্প করতে পারেনি।এ অবস্থা অবলকন করার জন্য বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের প্রতি একটু নজর বুলান। পক্ষান্তরে মানব ও মানবতার এ জটিল সমাস্যার স্থায়ী সমাধান দিয়েছে আল-কোরআন এরশাদ হচ্ছে 
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَر. العنكبوت
নিশ্চয় নামাজ (নামাজীকে) অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আল-আনকাবুত; ৪৬
আয়াতে ব্যবহৃত الْفَحْشَاء   শব্দের অর্থ এমন সুস্পষ্ট মন্দ কাজ যাকে মোমেন ও কাফের বির্বিশেষে প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তিই মন্দ মনে করে; যেনম ব্যভিচার,অন্যায়, হত্যা,চুরি ডাকাতি ইত্যাদি।পক্ষান্তরে الْمُنْكَر এমন কাজকে বলা হয়, যার হারাম ও অবৈধ হওয়ার ব্যপারে শরীয়ত বিশারদগণ একমত। এক কথায় الْفَحْشَاء   ও الْمُنْكَر শব্দদ্বয়ের মধ্যে যাবতীয় অপরাধ  এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গোনাহ দাখিল হয়ে গেছে। যেগুলো  নিঃসন্দেহরূপে  সৎকর্মের পথে সর্ববৃহৎ বাধা। গভীর ভাবে লক্ষ করলে আমরা বুঝতে পারবো যে মানব রচিত বিধান দ্বারা শুধু সাময়ীক প্রকাশ্যে যে সমস্ত অন্যায় ও অপরাধ সংঘটিত হয় তা দমন করা সম্ভব কিন্তু অপ্রকাশ্যে এবং রাতের অন্ধকারে যে সমস্ত অপরাধ সংঘটিত হয় তা কোন বাহিনী বা মানব রচিত বিধান দ্বারা দমন করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। তবে হাঁ যে সমস্ত অপরাধ মানষের অগচরে-গুপনে,রাতের অন্ধকারে যার কোন খবর পৃথিবীর কেউ রাখতে পারেনা এমন অপরাধ দমনের গ্যারান্টি দিচ্ছে একমাত্র নামাজ। কারণ নামাজে দন্ডয়মান হওয়ার কারণে মানব মনে আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহাত্মের যে উপলদ্ধি আসে তা অন্যায় অশ্লীল কাজ থেকে মানুষকে অবশ্যই বিরত রাখে। তত্ত্বজ্ঞানীগণ বলেছেন, নামাজের কারণে মানব মনে আল্লাহ পাকরে ভয়ের উদ্রেক হয় আর তা মানুষকে পাপাচার থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের মহান দরবারে নামাজের মাধ্যমে হাযির হয়, নিজের দীনতা-হীনতা স্বীকার করে এবং বিনয় প্রকাশ করে, জীবনের কৃত অন্যায়ের জন্যে ক্ষমা প্রার্থী  হয়  এবং আল্লাহ পাকের আযাবের ভয়ে ভীত –সন্ত্রস্ত  হয়, তার পক্ষে নামাজের পর পুনরায়  পাপাচারে লিপ্ত হওয়া কি করে সম্ভব হতে পারে! নামাজী ব্যাক্তি যখন দরবারে এলাহীতে হাযির হয়, তার প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহ পাকের অনুগত্য প্রকাশ করে, তার অন্তর সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাকের ভয়ে কম্পমান থাকে, সে প্রথমে দন্ডয়মান অবস্থায়, পরে রুকু অবস্থায়,অবশেষে সেজদারত হয়ে আল্লাহ পাকের দরবারে মিনতি প্রকাশ করে, এরপর তার পক্ষে অন্যায়-অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়া সম্পূর্ণ অকল্পনীয়। এখানে একটা কথা  বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, নামাজ রুকু ,সেজদা ,আরকান আহকাম যথা নিয়মে হতে হবে। আল্লামা বগভী রহ. হযরত আনাস র. বর্ণিত হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে ছেন।তিনি বর্ণনা করেছেন, একজন আনছারী যুবক হযরত রসূলে করীম স. সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন।কিন্তু এতদসত্ত্বেও সে বিভিন্ন প্রকার পাপাচারে লিপ্ত  হতো তার এ অবস্থা সর্ম্পে প্রিয়নবী স. কে অবহিত করা হয়। তখন তিনি এরশাদ করেন, তার নামাজ তাকে একদিন এসব গুনাহ থেকে বিরত করবে। কিছুদিন পর তাই হলো । সে তওবা করে ফেললো এবং তার অবস্থ ঠিক হয়ে গেল। আধুনিক ব্যাখ্যাকারগণ এর একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বসন্ত-কলেরার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষে  যেভাবে টীকা বা ইনজেকশন দিয়ে থাকেন এবং তার দ্বারা উপকারও হয়, ঠিক তেমনি অন্যায়-অশ্লীলতা এক কথায় পাপের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে নামাজ প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।যেভাবে যথা নিয়মে নামাজ ঔষধ সেবন, ইনজেকশন গ্রহণ রোগ নিরাময়ের জন্য বা রোগ আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্যে জরুরী মনে করা হয়,  ঠিক তেমনি যথা নিয়মে নামাজ আদায়ের মাধ্যমেও মানব মন পাপাচার থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে পারে। নামাজে আন্তরিকতা, মনের একাগ্রতা ,আল্লাহ পাকের ভয়, তাঁর রহমতের আশা, আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠত্বের উপলদ্ধি যত অধিক পরিমাণে হবে , নামাজ তত বেশী পাপাচার থেকে বিরত রাখতে সফল হবে। একজন নামাজী ব্যক্তি নামাজের যাবতীয় কল্যান ওই সময় পাবে যখন সে “اقامت صلوٰة  ”করবে। কোরআন কারীমে যতবার নামাজের তাগীদ দেওয়া হয়েছে সাধারণত “اقامت صلوٰة ” শব্দের মাধ্যমেই দেওয়া হয়েছে। নামাজ পড়ার কথা শুধু দু’এক জায়গায় বলাহয়েছে।এজন্য “ اقامت صلوٰة ”( নামাজ প্রতিষ্ঠা)-এর মর্ম অনুধাবন করা উচিত । اقامت-এর শাব্দিক অর্থ সোজাকরা, স্থায়ী রাখা। সাধারণত যেসব খুঁটি দেওয়াল বা গাছ প্রভৃতির আশ্রয়ে সোজাভাবে দাঁড়ানো থাকে , সে গুলো স্থায়ী থাকে এবং পড়ে যাওয়ার আশংকা কম থাকে। এজন্য স্থায়ী ও স্থিতিশীলকরণ অর্থেও ব্যবহার হয়।কোরআন সুন্নাহ্র পরিভাষায় “اقامت صلوٰة ” অর্থ নির্ধারিত সময় অনুসারে যাবতীয় শর্ত ও নিয়ম রক্ষা করে নামাজ আদায় করা। শুধু নামাজ পড়াকে “اقامت صلوٰة ”  বলা হয়না। নামাজের যত গুণাবলী , ফলাফল , লাভ ও বরকতের কথা কোরআন হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে তা সবই “اقامت صلوٰة  ” ( নামাজ প্রতিষ্ঠা)-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। এ জন্য প্রতিটি নামাজী ব্যক্তির জন্য এই সমস্ত বিষয়ের পূর্ণ জ্ঞান রাখা দরকার যা তার নামাজ প্রতিষ্ঠা করতে লাগে, তা না হলে সে নামাজের কল্যাণ, ও বরকত হতে মাহরুম হবে। তাই এখন নামাজের গুরুত্বপূর্ণ মাসেয়েল নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
নামাজ আরম্ভ করার পুর্বে যে সমস্ত কাজ অবশ্য কর্তব্য।
১। শরীর পাক হওয়া।
২। কাপড় পাক হওয়া।
৩। নামাজের জায়গা পাক হওয়া।
৪। ছতর ঢাকা।
৫। ক্বেবলা মুখি হওয়া।
৬। নিয়ত করা।
৭। নামাজের ওয়াক্ত হওয়া।
নামাজের পূর্বেই নামাজীকে আবশ্যই ছোট নাপাক ও বড় নাপাক থেকে শরীর পাক করে নিতে হবে। বড় নাপকা থেকে শরীর পাক করার একমাত্র উপায় হল গুসল করা।
এবার আসুন জেনে নেই গুসল ফরজ হয় কখন।
১। খাহেসের সাথে, উত্তেজনার সাথে বীর্য ক্ষরণ হলে, বীর্য বের হলে গুসল ফরজ হয়, চাই পুরুষের হোক বা মহিলার, ঘুমন্ত অবস্থায় হোক বা জাগ্রত অবস্থায়।
 ২। সহবাসে দ্বারা চাই নিজ স্ত্রীর সাথে হোক বা অবৈধ পন্থায় হোক বীর্যর্  বের হোক অথবা না হোক।
নারীর নির্ধারীত গুসল
 ৩।যখন ঋতু¯্রাবের রক্তপাত শেষ হয়ে যাবে, তখন নারীকে নামাজ বা যে কাজ গুলির জন্য পবিত্র থাকা আবশ্যক সে গুলি আঞ্জাম দেয়ার জন্য তার গুসল করা ফরজ।
রক্তপাত ৩ দিনের কম হবেনা, অতএব যদি তিন দিনের আগে শেষ হয়ে যায়, তবে তা ঋতু¯্রাবের রক্ত নয় বরং এটা এসতেহাযার রক্ত।
এবং দশ দিনের বেশিও থাকবেনা, অতএব যদি দশ দিনের বেশি থাকে তাহলে দশ দিনের পর থেকে সে গুলো এসতেহাযার রক্ত বলে গণ্য হবে। 
  
গ) - রক্তপাত দশ দনিরে বশেি থাকবে না, অতএব যদি দশ দনিরে বশেি থাকে তাহলে দশ দনি পর থকেে ঋতুস্রাবরে রক্ত নয় বরং তা এসতহোযার রক্ত বলে পরগিণতি হব।নামাজ আরম্ভ করবিার র্পূবে যে সমস্ত কাজ অবশ্য র্কতব্য, তাহাকে নামাযরে র্শত বলে । ইহা আটট;ি যথা :-
১) শরীর পাক-পবত্রি করয়িা লওয়া, র্অথাৎ অযু কংিবা গোসলরে প্রয়োজন হইলে তাহা আদায় করয়িা লইতে হইবে ।
২) পোষাক পাক হওয়া । যদি কাপড়ে কোন নাপাক বস্তু নাগয়িা থাকে তাহা ধুইয়া পাক করয়িা লইবে অথবা উহা পরর্বিতন করয়িা পাক-পবত্রি কাপড় পরধিান করয়িা লইতে হইবে ।
৩) স্থান পাক হওয়া -র্অথাৎ যে স্থানে দাঁড়াইয়া নামায পড়বি,ে তাহা পাবত্রি হওয়া ।
৪) ছতর ঢাকয়িা লওয়া – র্অথাৎ নামায পড়বিার সময়ে পুরুষরে নাভী হইতে ও স্ত্রীলোক হইলে মুখ, হাতরে কব্জা ও পায়রে তলা ব্যতীত সমুদয় শরীর ঢাকয়িা লওয়া কন্তিু বাদী হইলে পটে, পঠি, র্পাশ্ব ও নাভী হইতে জানুর নীচ পযন্ত কাপড় দ্বারা ঢাকয়িা লওয়া ফরয ।
৫) কাবা শরীফরে দকি মুখ করয়িা দাঁড়ান ।
৬) নর্দিষ্টি ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা । নয়িত করা-যে ওয়াক্তরে নামায পড়বি,ে তাহার নয়িত করা ।
৭) তাকবীরে তাহরীমা বলা । র্অথৎ নামাজরে নয়িত করয়িা “আল্লাহু আকবার” বলয়িা নামায আরম্ভ করা।
নামাযরে রোকনসমূহ


      

























খ) - রক্তপাত ৩ দনিরে কম হবে না, অতএব যদি তনি দনিরে আগে শষে হয়ে যায়, তবে তা ঋতুস্রাবরে রক্ত নয়।

No comments:

Post a Comment

শবে বরাত- কিছু ভ্রান্তি নিরসন..

........................................ (শবে বরাত কোথায় আর আমরা কোথায়!) ....................................................... ইস...

Clock