Wednesday, May 3, 2017

রোযার আহকাম







হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোযা ফরজ  করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।( সূরা- আলা-বাকারা; ১৮০)
মানব জীবন পূতঃপবিত্র করে গড়ে তোলার অত্যন্ত কার্যকর পন্থা হলো মাহে রমজানের সিয়াম সাধনাআর সিয়াম সাধনার দ্বারা মানুষ অর্জন করতে পারে এমন এক শক্তি, যে শক্তির মাধ্যমে সে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনে মহাবিপ্লব ঘটাতে পারবেআর সে শক্তিই হচ্ছে তাকওয়া, যার ঘোষণা মহান আল্লাহ পাক উক্ত আয়াতে দিয়েছেন
হাদীস শরীফে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যখন রমজান মাস আসে তখন আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া  হয়অপর বর্ণনায় এসেছে রহমতের  দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয় অপর এক বর্ণনায় এসেছে বেহেশতের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয়, এবং দোযখের দরজা সমূহ বন্ধকরে দেওয়া হয়আর শয়তানকে করা হয় শৃক্সখলিত। (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছওয়াবের নিয়তে রমজানের রোযা রাখে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হয়অনুরূপ ভাবে যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছওয়াবের নিয়তে রমজানে দন্ডায়মান হয় অর্থাৎ তারাবীর নামাজ সহ বিভিন্ন নফল নামজে আত্মনিয়োগ করে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হয়আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছওয়াবের নিয়তে শবে ক্বদরে দন্ডায়মান হয় তারও পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হয়।(বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, বনী আদমের সকল ভাল কাজের বিনিময় দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়, তবে রোজা ছাড়ামহান আল্লাহ পাক বলেন, রোজা একমাত্র আমাই জন্য এবং এর প্রতিদান আমি নিজেই দেবকারণ আমার বান্দা তার প্রবৃত্তির কামনা ও খাবার স্পৃহা একমাত্র আমার ভয়েই পরিহার করেছে। (মুসনাদে আহমদ)
রমজানের রোযার হুকুম
রমজানের চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক, প্রাপ্ত বয়ষ্ক, জ্ঞানসম্পন্ন, মুকীম মুসলমান পুরুষ ও হায়েয-নেফাস থেকে পবিত্র মহিলার উপর পূর্ণ মাস রোযা রাখা ফরজ
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে, এমন এক ব্যক্তির চাঁদ দেখার দ্বারাই রমজানের চাঁদ প্রমাণিত হয়ে যাবে,যার দ্বীনদার হওয়া সু-প্রমাণিত বা কমপক্ষে বাহ্যিক ভাবে তাকে দ্বীনদার বলে মনে হয়
আকাশ পরিস্কার থাকলে একজনের  খবর যাথেষ্ট নয়, বরং এমন সংখক লোকের খবর জরুরী যার দ্বারা চাঁদ উাদিত হওয়ার প্রবল বিশ্বাস স্থাপিত হয়
রোযার নিয়ত
রোযার নিয়ত করা ফরজনিয়তের অর্থ হচ্ছে,আন্তরে রোযার ইচ্ছা  করামুখে বলা জরুরী নয়তবে মুখেও বলে নেওয়া ভাল
রোযার উদ্দেশ্যে সাহরী খেলে, সেটাই নিয়তের জন্য যথেষ্টরমজানের রোজার নিয়ত রাতে করাই উত্তমতবে সূর্য ঢলার আগে আগে নিয়ত করলেও রোযা হয়ে যাবে
পুরো রমজানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়

সাহরী
সাহরী খাওয়া সুন্নতপেট ভরে খাওয়া জরুরী নয়এক ডোক পানি পান করে সাহরী করলেও সাহরীর সুন্নত আদায় হয়ে যাবেরসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন তোমরা সাহরী খাওকেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে
সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময়ে সাহরী খাওয়া মুস্তাহাবতবে এত দেরী করে সাহরী খাওয়া মাকরূহ, যাতে সুবহেসাদিক হয়ে যাওয়ার আশংকা হয়
ইফতার
১ দেরী না করে  সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করে নেওয়া মুস্তাহাব
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যতদিন মানুষ সুর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতে থাকবে ততদিন কল্যাণের উপর থাকবে
ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়তাই এ সময় বেশী বেশী দোয়া করতে থাকবেঅধীক হারে ইস্তিগফার, দরুদ, পড়বে ও মাগফিরাত কামনা করবে
ইফতারের সময় এ দোয়া পড়বে-
بسم الله ، اللهم لك صمت ، وعلى رزقك أفطرت
(আল-আজকার-আবু দাউদ)
ইফতারের পর এ দোয়া পড়বে-
ذهب الظمأ و ابتلت العروق و ثبت الأجر إن شاء الله
যে সকল কারণে রোযা ভেঙ্গে যায়, এবং কাযা ও কাফফারা উভয়ই জরুরী হয়
কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত আছে
(ক) রমজান মাস হতে হবে
(খ) রমজান মাসের রোযা হতে হবেবিধায় যদি কেউ রমজান মাসে সফরে থাকে এবং অন্য বছরের ক্বাজা রোজার নিয়ত করে রোযা রাখে এবং পরবর্তিতে তা ভেঙ্গে ফেলে তাহরে তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবেনা
(গ) স্বেচ্ছায় ও স্বাধীন ভাবে রোযা ভাঙ্গতে হবেসুতরাং জবরদস্তির মাধ্যমে রোযা ভাঙ্গলে কাফফারা ওয়াজিব হবেনা
(ঘ) ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ভাঙ্গতে হবে
(ঙ) রোযা ভাঙ্গার পর, দিনের অবশিষ্ট সময় অসুস্থতা দেখা না দেওয়া

রোযা রেখে কোন প্রকার শরয়ী ওজর ছাড়াই ইচ্ছাকৃতভাবে,খাওয়া, পানকরা ও স্ত্রী সহবাস করাবৈধ ও  অবৈধ সহবাসের একই বিধান অর্থাৎ কাযা ও কাফফারা উভয়ই জরুরী
হুক্কা, বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি  পান করা
সুবহে সাদিক হয়ে গেছে একথা জানা সত্তে¡ও যদি আজান শোনা যায়নি বা সম্পূর্ণরূপে আলো হয়নি, এধরণের ভিত্তিহীন অযুহাতে ইচ্ছাকৃত ভাবে সহবাসে লিপ্ত হয়
স্বামী-স্ত্রী যে কেউ অন্যজনকে সহবাসে বাধ্য করলে, দুজনকেই কাজা কাফফারা আদায় করতে হবে
(৫) সর্বপ্রকার ঔষধ সেবনের দ্বারা রোযা ভেঙ্গে যায় এবং কাজা কাফফারা ওয়াজিব হয়
শুধু অক্রিজেন নেওয়ার দ্বারা রোযা নষ্ট হয়নাতবে অক্রিজেনের সাথে কোন ধরণের ঔষধ মিশ্রিত থাকলে রোযা ভেঙ্গে যাবেজেনে শুনে এধরণের অক্রিজেন ব্যবহার করলে কাজা কাফফারা ওয়াজিব হবে
কাফফারা আদায় করার নিয়ম
একটি রোযার পরিবর্তে ধারাবাহিক দুমাস রোযা রাখতে হবেচন্দ্র মাসের প্রথম তারিখ থেকে কাফফারার রোযা শুরু করেদুমাস রোযা রাখলেই চলবেযদি উভয় মাস বা কোন এক মাস ২৯ দিনে হয়, আর চাঁদের প্রথম তারিখ থেকে রোযা শুরু করা না হয়, তাহলে কাফফরা জন্য ধারাবহিক ৬০টি রোযা রাখতে হবে
যদি ধারাবহিক ভাবে দুমাস রোযা রাখার সামর্থ না রাখে, তাহেলে ৬০ জন মিসকিনকে দুবেলা পেটভরে খানা দিতে হবে, অথবা ৬০ জনকে এক এক ফিতরা সমান (১ কেজি ৬৫০ গ্রাম গম বা তার মূল্য )সদকা করে দিতে হবে
দুমাস রোযা রাখতে গিয়ে কোন প্রকার কোন ওজরের কারণেও যদি ধারাবাহিকতা ছুটে যায় যেমন: ঈদের কারণে বা অসুস্থার কারণে তাহলে পুনরায় তাকে কাফফারা আদায় করতে হবেতার আগের রোযা এক্ষেত্রে ধর্তব্য হবে না
মহিলাদের বিশেষ দিন গুলোর (হায়েযের)  কারণে ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে, পুনরায় নতুন করে শুরু করতে হবেনাতবে নিফাসের (সন্তান প্রসব পরবর্তী শ্রাব)কারণে ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে, আবার নতুন করে হিসাব শুরু করতে হবে
যে সমস্ত কারণে শুধু রোযা কাযা করতে হয়
অযু ও গোসলের সময় রোযা স্মরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে, কণ্ঠনালীতে পানি চলে গেলে
দাঁতের ফাঁকে থেকে যাওয়া  (ছোলা পরিমাণ বা তার অধিক) খাবার গিলে ফেললে
অন্যের হুমকিতে বাধ্য হয়ে রোযা ভাঙ্গলে
ঘাম বা চোখের পানি এত বেশী পরিমাণে মুখে প্রবেশ করার দ্বারা যার ¯^াদ কণ্ঠনালীতে অনুভব হয়
অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন খাদ্য বা পানীয় গলায় প্রবেশ করালে
যে সমস্ত বস্তু সাধারনত খাদ্যদ্রব্য নয়, যা মানুষ খাবার হিসাবে গ্রহণ করেনা, সেগুলো খেয়ে নিলে, যেমন পাথর, মাটি, কাঠ ইত্যাদি
অন্যের থুথু গিলে নিলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়তবে বন্ধু-প্রিয়জন ও স্ত্রীর থুথু খেলে কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়
বমি মুখে চলে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে নিলে যদিও তা অল্প হয়
দাঁত দিয়ে রক্ত বের হয়ে থুথুর সাথে পেটে চলে গেলেতবে রক্তের পরিমাণ থুথুর সমান বা বেশী হতে হবে
১০নিজের স্ত্রী বা অপর নারীকে চুম্বন বা আলিঙ্গনের দ্বারা বীর্যপাত হলে
১১হস্তমৈথুনের ব্দারা বীর্যপাত ঘটালে
১২কোন পশুর সাথে বীর্যপাত ঘটালে
১৩মহিলারা সমকামিতায় লিপ্ত হয়ে শুক্র ক্ষরণ করলে
১৪নিজের থুথু  মুখ থেকে বের করে পূণরায় গিলে নিলে
১৬পেটের ক্ষতস্থানে ঔষধ দিলেযদি তা খাদ্যনালীতে চলে যায়
১৭সুবহে সাদিকের পর সাহরির সময় আছে মনে করে খেলে ও স্ত্রী সহবাস করলেতদ্রুপ ইফতারির সময় পূর্বে ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে ইফতার করলে
১৮বমন হওয়ার কারণে রোযা নষ্ট গেছে ভেবে রোযা ভেঙ্গে ফেললে
১৯ভুল করে কোন কিছু খাওয়া বা পান করার পর রোযা নষ্ট হয়ে গেছে ধারণা করে ইচ্ছাকৃত ভাবে খাওয়া বা পান করা

যে সব কারণে রোযা ভাঙ্গেনা
ভুলবশত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস করলে
রোযা অবস্থায় চোখে সুরমা লাগালে
¯^প্নদোষ হলে
সুবহে সাদিকের পূর্বে ফরজ গুসল করতে না পরলে
রোযা অবস্থায় ¯^ীয় স্ত্রীর সাথে আলিঙ্গন করা জায়েয, যদি সহবাসের ভয় না থাকে
অনিচ্ছাকৃত বমন হলে, এমনকি মুখ ভরে হলেওতেমনি বমি মুখে এসে নিজেই ভেতরে চলে গেলে রোযার কোন ক্ষতি হবেনা
দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকা ছোলার দানার চেয়েও কম পরিমাণের খাবার গিলে নিলেতবে উক্ত খাবার মুখ থেকে বের করে পুণরায় গিলে নিলে রোজা ভেঙ্গে যাবেএবং কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে
ধোঁয়া বা ধুলো- বালি অনিচ্ছাকৃতভাবে পেটের ভেতরে ডুকে গেলে
মাছি বা কিটপতঙ্গ অনিচ্ছাকৃতভাবে পেটের ভেতর ডুকে গেলে
১০শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলে
১১চোখের দু এক ফোটা পানি মুখে চলে গেলে
১২সাহরীর সময় পান খেলে আবশ্যই ভালভাবে মুখ ধুতে হবেযাতে পান শুপারীর কোন অংশ মুখে না থাকেএর পরও যদি থুথুতে লালচে ভাব থাকে তাতে কোন খতি নাই
১২কশন নিলে রোযা ভাঙ্গেনাএমনকি গ্লুকোজ ইঞ্জেকশন নিলেওতবে বিনা প্রয়োজলে এধরণের  ইনঞ্জেকশন নেওয়া মাকরুহ
১৩শুধু অক্রিজেন নেওয়ার দ্বারা রোযা নষ্ট হয়না, অক্রিজেনের সাথে  প্রকার ঔষধ থাকলে রোযা ভেঙ্গে যাবে কাজা কাফফারা ওয়াজিব হবে
১৪টেস্ট করার জন্য মুখ/নাক দিয়ে কোন টেস্টের যন্ত্র/পাইপ গলার ভিতর প্রবেশ করালে রোযা ভাঙ্গবেনা
১৫ঠান্ডা অথবা গরম পানিতে গোসল করার পর, অন্তরে ঠান্ডা বা গরম অনুভুত হলে রোযার কোন ক্ষতি হবেনা
১৬আটা পেষণ করা এবং তামাক চুর্ন করার সময় আটা এবং তামাক উড়ে কণ্ঠনালীতে প্রবেশ করলে রোযা ভাঙ্গবেনা
১৭জোরে নিঃশ্বাস নেয়ার সময় নাকের ময়লা ময়লা কণ্ঠনালীতে চলে গেলে তদ্রুপ মুখের থুথু ও লালা গিলে ফেলার কারণে রোযা নষ্ট হয়না
১৮নিজের থুথু যত বেশী হোক না কেন তা গিলে ফেলার কারণে রোযা নষ্ট হবেনা
২৯মিছওয়াকা করার কারণে যদি দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে, যদি সে রক্ত কণ্ঠনালীতে না যায় তাহলে রোযা নষ্ট হবেনা
২০কোন মেয়ে মানুষকে দেখার কারণে অথবা কল্পনা করার কারণে যদি বীর্যপাত হয় তা হলে রোযা নষ্ট হবেনা

যাদের রোযা না রাখার অনুমতি হয়েছে
অসুস্থ ব্যক্তি
রোযার কারণে যদি অসুস্থ ব্যক্তির রোগ বৃদ্ধি পায় অথবা সুস্থ হতে অনেক বিলম্ব হয়ে যাওয়ার প্রবল আশংকা থাকে, তাহলে তার জন্য রোযা না রাখা ও রোজা ভাঙ্গার অনুমতি আছেতবে এসব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ দ্বীনদার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য শরীয়ত জোর তাগীদ দিয়েছে
মুসাফির
মুসাফিরের জন্য সফর অবস্থায় রোযা না রাখার সুযোগ রয়েছেতবে অ¯^াভাবিক কষ্ট না হলে রোযা রাখাই উত্তম আর ¯^াভাবিক কষ্ট হলে রোযা রাখা মাকরুহএমতাবস্থায় রোযা না রেখে পরে তা কাজা করে দিবে
সফর অবস্থায় নিয়ত করে রোযা রাখা শুরু করলে পরে তা আর ভাঙ্গা জায়েয হবেনা যদি ভেঙ্গে ফেলে তাহলে তা হলে সে গুনাহগার হবেউক্ত রোযার কাজা তার উপর ওয়াজিব কাফফারা নয়
কোন ব্যক্তি রোযা অবস্থায সফর শুরু করলে উক্ত দিনের রোযা সে ভাঙ্গতে পারবেনাভাঙ্গলে গুনাহগার হবে এবং তার উপর শুধু কাজা ওয়াজিব
মুসাফির ব্যক্তি সূর্য ঢলার পূর্বেই যদি মুকীম হয়ে যায়, আর তখন পর্যন্ত রোযা পরিপন্থী কোন কাজ না করে থাকে এবং রোযার নিয়তও না করে থাকে তবে এক্ষেত্রে সে ঐ দিনে আর পানাহার করতে পারবেনা সূর্য ঢলার পূর্বেই রোযার নিয়ত করে নিতে হবেঅন্যথায় রোযা না রাখার কারণে সে গুনাহগার হবে এবং এ ক্ষেত্রে তাকে শুধু কাজাই করতে হবে, কাফফরা নয়
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারিনী
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারিনী যদি মস্তিঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অথবা প্রাণবায়ূ উড়ে যাওয়ার অথবা নিজে কিংবা সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রবল আশংকা হয় চাই দুগ্ধপোষ্য শিশুটি স্তন্যদানকারিনীর গর্ভজাহ হোক অথবা দুধ শরীক হোক আশংকার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে এমন প্রবল আশংকা যা পূর্ব অভিজ্ঞাতর আলোকে কিংবা ন্যায় পরায়ণ অভিজ্ঞ মুসলমান ডাক্তারের পরামর্শ  দানের ভিত্তিতে
উক্ত মহিলাদের জন্য রোযা ভাঙ্গার আনুমতি আছে এবং সে পরে উক্ত রোযার কাজা আদায় করবে
বৃদ্ধ-দুর্বল ব্যক্তি
এমন প্রৌঢ় ব্যক্তি , যার বয়সের ভারে দুর্বলতার কারণে রোযা রাখার শক্তি নাইএমন ব্যক্তির জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছেএ ক্ষেত্রে সে প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে একজন গরীবকে দুবেলা খানা খাওয়াবে অথবা  ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম গম বা তার মূল্য সদকা করে দিবে
ফিদইয়া
রোযা রাখার সামর্থ নাই এবং পরবর্তীতে কাযা করতে পারবেনা এমন সম্ভনাও নাই এমন ব্যক্তিবর্গ রোযার পরিবর্তে ফিদইয়অ প্রদান করবেযেমন কোন ব্যক্তি এমন বৃদ্ধ হয়ে যায় যে তার রোযা রাখার শক্তি নাই এবং এ তার জিবনে সে আর সামর্থবান হবে বলে আশাও করা যায়না, অথবা এমন রোগাকান্ত ব্যক্তি যার আর সুস্থ হওয়ার আশা নাই-এ ধরণের বাক্তিবর্গ রোযা না রেখে ফিদইয়া দিবে
এক রোযার পরিবর্তে এক ফিদইয়া ওয়াজিবএক ফিদইয়ার পরিমাণ হচ্ছে, ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম গম বা তার মূল্য
রোযার ফিদইয়া তাদের দেওয়া যাবে যাদের সদাকাতুল-ফিতর দেওয়া জায়েয
যাদের রোযার পরিবর্তে ফিদইয়া দেওয়া জায়েয তারা রমজানের শুরুতেই পুরো মাসের ফিদইয়া দিয়ে দিতে পারে
উপরে উল্লেখিত দুপ্রকার ব্যক্তি(একে বারে দুর্বল বৃদ্ধ ও এমন রুগী যার কখনো রোযা রাখার শক্তি পাওয়ার সম্ভবনা নাই)  ছাড়া আরো যাদের জন্য রোযা ভাঙ্গা জায়েয আছে যেমন, মুসাফির,গর্ভবতী স্তন্যদানকারিনী ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ যদি রোযার বদলে ফিদইয়া দেয়  তাহলে জায়েয হবেনাতাদের জন্য রোযা রাখা জরুরী
ছুটে যাওয়া রোযার কাজা সম্ভব না হলে মৃত্যুর পূর্বে ফিদইয়া দেওয়ার ওসিয়ত করে যাওয়া জরুরীঅসিয়ত করে না গেলে ওয়ারিছগণ যদি মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ফিদইয়া দেয়, তবে আশা করা যায় যে আল্লাহ পাক তা কবুল করবেন
এক রোযার ফিদইয়া একজন মিসকীনকে দেওয়াই উত্তম তবে একধিক ব্যক্তিকে দিলেও ফিদইয়া আদায় হয়ে যাবেতদ্রুপ একাধিক ফিদইয়া একজন মিসকীনকেও দেওয়া যেতে পারে
ছোট বাচ্চা বা নাবালেগকে খাওয়ালে ফিদইয়া আদায় হবেনা
অক্ষম বৃদ্ধ ও মৃত্যু মুখে পতিত রুগী যদি পুনরায় রোযা রাখার শক্তি পায় তাহলে তাদেরকে ছুটে যাওয়া রোযাগুলোর কাযা আদায় করতে হবেতবে আদায় কৃত ফিদইয়ার জন্য পৃথকভাবে ছওয়াব পাবে
রোযার মাকরুহ সমুহ
কুলি করার সময় গড়গড়া করা এবং নাকে পানি দেওয়ার সময় ভেতরে পানি চলে যাওয়ার আশংকাা থাকে এরূপ অসর্তকতার সাথে উপরে পানি পৌছানো
বিনা ওজরে কোন কিছু চিবানো অথবা জিহŸাতে লাগানোযদিও তার ¯^াদ গলাতে অনুভব না হয়
এমন কাজ করা মাকরুহ যা দ্বারা রোযা দুর্বল হয়ে যায়
পুরুষাঙ্গের ভেতর কোন ঔষধ বা তরল পদার্থ প্রবেশ করানো
মিথ্যা বলা
গীবত বা চোগলখোরী করা
গালি-গালাজ করা
টিভি,সিনেমা ইত্যাদি দেখা
১০গান-বাদ্য শ্রবন করা
১১যে কোন ধরণের গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া
১২ঝগরা-ফাসাদ করা
¯^রণ রাখা দরাকার যে (৫ থেকে ১২)  উক্ত কাজগুলো সর্বাবস্থায় হারাম
১৩যৌন কামনায় স্ত্রীকে স্পর্শ ও চুমু খাওয়া
১৪রাতে সহবাসের পর গোসল না করে রোযা রাখা
১৫কয়লা, মাজন টুথপাউডার ও টুথপেস্ট দিয়ে বা গুল দিয়ে দাঁত মাজা
১৬অনার্থক কোন জিনিস মুখের ভেতর দিয়ে রাখা
১৭ইচ্ছকৃতভাবে অল্প বমি করা
১৮সারা দিন নাপাক অস্থায় থাকা
১৯এমন সব কাজ করা যা রোযাকে দুর্বল করে দিবে বলে ধারনা করা হয়
তিনটি জিনিস রোযাদারের জন্য মুস্তাহাব
সাহরী খাওয়া
সাহরীর সময়ের শেষভাগে সাহরী খাওয়া
মেঘলা দিন ব্যতিত অন্য দিনে (ইফতারের সময় হওয়া মাত্র) তাড়াতাড়ি ইফতার করা

তথ্য সূত্র:
তাফসীরে নূরুল কোরআন
বুখারী শরীফ
মুসলিম শরীফ
ফাতাওয়া শামী
ফাতাওয়া হিন্দিয়া
কিতাবুল- উসূল
আল-বাহরুর রাইক
ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া
আহছানুল-ফাতাওয়
ফাতাওয়ায়ে দারুল-উলূম দেওবন্দ
কদূরী
নূরুল-ঈযাহ
হেদায়া
ফাজায়েলে রমাজানা
আহাকামে রমজান













No comments:

Post a Comment

শবে বরাত- কিছু ভ্রান্তি নিরসন..

........................................ (শবে বরাত কোথায় আর আমরা কোথায়!) ....................................................... ইস...

Clock