Sunday, May 7, 2017

গুসল ফরজ হয় কখন?




খাহেসের সাথে, উত্তেজনার সাথে বীর্যক্ষরণ হলে, বীর্য বের হলে গুসল ফরজ হয়, চাই পুরুষের হোক বা মহিলার, ঘুমন্ত অবস্থায় হোক বা জাগ্রত অবস্থায়
সহবাসে, চাই নিজ স্ত্রীর সাথে হোক বা অবৈধ পন্থায় হোক, বীর্য  বের হোক অথবা না হোক
নারীর নির্ধারীত গুসল
যখন ঋতুস্রাবের রক্তপাত শেষ হয়ে যাবে, তখন নারীকে নামাজ বা যে কাজ গুলির জন্য পবিত্র থাকা আবশ্যক সে গুলি আঞ্জাম দেয়ার জন্য তার গুসল করা ফরজ
রক্তপাত ৩ দিনের কম হবেনা, অতএব যদি তিন দিনের আগে শেষ হয়ে যায়, তবে তা ঋতুস্রাবের রক্ত নয় বরং এটা এসতেহাযার রক্ত
এবং দশ দিনের বেশিও থাকবেনা, অতএব যদি দশ দিনের বেশি থাকে তাহলে দশ দিনের পর থেকে সে গুলো এসতেহাযার রক্ত বলে গণ্য হবে
নিফাসের পর গুসল করা ফরজ, সন্তান প্রসাবের পর যে রক্ত বের হয় তাকে নিফাস বলেনিফাসের নিম্মতম কোন সময়সীমা নেই, তবে উর্ধতম সময়সীমা হচ্ছে চল্লিশ দিনআর এর অতিরিক্ত যা হবে তা ইসতিহাজা হিসেবে গণ্য হবেযদি কোন নারীর চল্লিশ দিনের বেশী স্রাব অতিক্রম করে অথবা এ নারী এর পূর্বেও সন্তান প্রসব করেছে এবং পূর্বের প্রসবে তার একটি নির্দিষ্ট সময়ের অভ্যাস ছিল, তবে তার অভ্যাসের দিনগুলোর দিকে নিফাসের মুদ্দতকে ফিরাতে হবেআর যদি তার নির্ধরিত অভ্যাস না থাকে, তবে তার নিফাস চল্লিশ দিন ধরতে হবেমহিলারা সন্তান প্রসবের পূর্বে  যে রক্ত দেখবে তাকে ইসতেহাজা বলা হয়
ইসতিহাজা
পাঁচ প্রকারের রক্তকে ইসতিহাজা  বলা হয়
১.         যে রক্ত নয় বছরের কম বয়স্কা বালিকার প্রবাহিত হয়
২.         যে রক্ত দশ দিনের বেশী সময় ধরে প্রবাহিত হয়
৩.         যে রক্ত তিন দিনের কম সময় ধরে প্রবাহিত হয়
১.         যে রক্ত গর্ভাবস্থায় প্রবাহিত হয়
২.         যে রক্ত প্রসাবান্তে চল্লিশ দিনের বেশী সময় ধরে প্রবাহিত হয়
ইসতিহাজা, নাকসির এবং আঘাত হতে সর্বদা রক্ত ঝরা ব্যক্তির হুকুম
কারো নাক বা অন্য কোন যখম হতে অবিরাম রক্ত ঝরে  অথবা ফোটায় ফোটায় প্রস্রাব পরে এবং এতটুকু সময়ের জন্যেও বন্ধ হয় না, যতটুকু সময়ের মধ্যে সে অযূ করে নামাজ পড়তে পারবে
শরীয়তের পরিভাষায় এমন ব্যক্তিদের মাযূর বলেএমন ব্যক্তির শরীয়তের বিধান হলো, প্রত্যেক নামাজের ওয়াক্তের জন্যে একবার অযূ করে নিবেএবং যতক্ষণ এ নামাজের সময় থাকবে ততক্ষণ তার অযূ থাকবে
উল্লেখ থাকে যে, যে কারণে সে মাযূর হয়েছে সেই কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণ যদি দেখা দেয়, যার দ্বারা অযূ ভেঙ্গে যায় তাহলে আর অযূ থাকবে না
নতুন করে অযূ করতে হবেযেমন- এক ব্যক্তির নাক দিয়ে অনর্গল রক্ত ঝরছেএখন সে জোহর নামাজের জন্য অযূ করলতাহলে যতক্ষণ  যোহর নামাজের সময় থাকবে ততক্ষণ নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কারণে অযূ ভাঙ্গবে না
কিন্তু যদি এই সময়ের মধ্যে সে প্রস্রাব বা পায়খানা করে থাকে অথবা সূচবিদ্ধ হয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে তাহলে অযূ ভেঙ্গে যাবে
যদি এমন কিছু না হয় তাহলে দ্বিতীয় নামাজের সময় হলেই দ্বিতীয় নামাজের জন্য নতুন অযূ করতে হবেপূর্বের অযূ শেষতবে প্রত্যেক নামাজের ওয়াক্তে যে অযূ করা হবে তার দ্বারা ফরয,নফল যা খুশি যত খুশি নামাজ-ইবাদত করতে পারবে
ফরজ গুসল যেভাবে করবেন
গুসলের পূর্বে  কব্জি পর্যন্ত উভয় হাত ধুয়ে নিতে হবেতারপর নাপাক থাক বা
না থাক হাত এবং ইসতিঞ্জার জায়গাটা ধুয়ে নিতে হবে, তারপর শরীরে কোথাও নাপাক থাকলে সেটাও সাফ করে নিতে হবেযদি কোন চৌকি ওথবা উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে গুসল করে তাহলে প্রথমে অযূ করার সময়  পা দুটোও ধুয়ে নিবেআর যদি এমন জায়গা না হয় বরং পা ধুলে আবার পা নাপাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে পা ধুবে না, পা পরে ধুয়ে নিবেওযূ শেষ করার পর প্রথমে তিনবার মাথায় পানি ঢালতে হবেএরপর তিনবার ডান কাঁধের উপর পানি ঢালতে হবে তারপর তিনবার বাম কাঁধের উপর
এভাবে সমস্ত শরীরের উপর পানি ভাসিয়ে দিবে
উল্লিখিত বর্ণনা অনুযায়ী গুসল করা সুন্নততবে গুসলের মধ্যে এমন কিছু বিষয় আছে যা ফরজযে গুলো আদায় করা অত্যাবশ্যকীয়এর একটিও সামান্য শুকনো থাকলে গুসল হবে না
গুসলের ফরজ ৩টি
১. এমনভাবে কুলি করা যাতে সমস্ত মুখের ভিতর পানি পৌছে যায়
২. নাকের নরম অংশ পর্যন্ত পানি পৌছানো
৩. শরীরের উপর পানি ভাসানো
গুসলের সময় যদি চুল বেনী করা থাকে তাহলে চুল ভেজাতে হবেনা, তবে প্রতিটি চুলের গোড়ায় পানি পৌছাতে হবেআর যদি চুল বেনী করা না হয়, তা হলে প্রতিটি চুল ও চুলের গোড়া ধোয়া ফরজযদি একটি মাত্র চুলের গোড়াও শুকনো থাকে তাহেল গুসল হবে নাআর যদি বেনী খোলা ছাড়া চুলে গোড়ায় পানি না পৌছে তাহলে বেনী খুলে চুল ও চুলের গোড়ায় পানি পৌছানো ওয়াজিবযদি নাকে নথ, বালি এবং হাতে আংটি থাকে তাহলে সেগুলো ভাল ভাবে নেড়ে-চেড়ে নিবেযেন এগুলোর নিচে ভাল ভাবে পানি পৌছে যায়এমনিভাবে যদি নখের মধ্যে আটা ইত্যাদি লেগে থাকে, যার কারণে পানি পৌছবে না, তাহলে আটা ইত্যাদি বের করে পানি পৌছানো ব্যতীত গুসল হবে নাকারো নাভির গভীরতা যদি বেশী হয়, তাহলে নাভির গভীরে ভাল ভাবে পানি পৌছানো ব্যতীত গুসল হবে না
সারকথা, গুসলে যে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়া ফরজ, সে সমস্ত অঙ্গের যদি এক চুল পরিামাণ জায়গাও ভেজা বাদ থাকে তাহলে গুসল হবে না, চাই এই জায়গা গুলো এমনে ধোয়া থেকে বাদ পরুক অথবা শরীরে চর্বি, গাম, নেলপালিশ ইত্যাদি থাকার কারণে বাদ পরুক
নদী-পুকুর খাল-বিলের প্রবহমান পানিতে যদি ফরজ গুসল করে তাহলে কাপড়-চোপড় এমন ভাবে ধুয়ে নিবে যেন কাপড়ে কোন প্রকার নাপাক না থাকেনাপাক দূর করার জন্যে যতবার দরকার ততবার ধুতে হবেআর যদি বাড়িতে, টিউবয়েলে অথবা টেপের পানিতে গুসল করে তাহলে প্রথমেই কাপড় বালতিতে রাখবে না, প্রথমে টিউবয়েল বা টেপের মুখের নিচে রেখে ভালভাবে নাপাকি দূর করে নিবে এবং ভালভাবে চিপে নিংড়িয়ে নিবে (কমপক্ষে ৩ বার) এভাবে তিনবার নিংড়িয়ে নিলে পাক হয়ে যাবে
আর যদি কেউ নাপাক কাপড় বালতিতে ধোয়, তাহলে ধোয়ার পর বালতির পানি ফেলে দিবে এবং নতুন পানি দ্বারা বালতি ধুয়ে নিংড়িয়ে নিবে
যদি কেউ এমন না করে, বরং উক্ত নাপাক পানি ফেলে দিয়ে আবার পানি নিয়ে কাপর ধোয় শুরু করে তাহলে কাপড় নাপাকিই থেকে যাবেএ বিষয়ে সবার সতর্ক থাকা দরকার
উত্তম পন্থা
স্বামী-স্ত্রী রাতের জন্য বিশেষ একটি পোষাক রাখবে যা তারা বিশেষ মুহুর্তে ব্যবহার করবে এবং গুসলের পুর্বে সে গুলো খুলে রেখে তাদের সাধারণ পোষাক পরে গুসল করবেএমন পন্থা অবলম্বন করলে আশা করা যায় বাসা-বাড়িতে বালতিতে গুসল করলে সন্দেহাতীত ভাবে পবিত্রতা অর্জন হবে
তবে আবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যেন এই সাধারণ কাপড়ে নাপাকী না নাগেবীর্য বের হওয়ার সাথে সাথে যদি কেউ গুসল করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে পেশাব করে নিতে হবেঅন্যথায় গুসল করলে পবিত্রতা অর্জন হবে নাআর যদি বীর্য বের হওয়ার এক ঘন্টা বা দেড় ঘন্টা পর গুসল করে তাহলে পেশাব না করলেও সারবে

No comments:

Post a Comment

শবে বরাত- কিছু ভ্রান্তি নিরসন..

........................................ (শবে বরাত কোথায় আর আমরা কোথায়!) ....................................................... ইস...

Clock