........................................
(শবে বরাত কোথায় আর আমরা কোথায়!)
.......................................................
ইসলাম শুধু মুসলমানদেরকে আমলই শিখায় না, বরং আমলের সাথে সাথে তদীয় আমলের সঠিক আকীদা-বিশ্বাসেরও শিক্ষা দেয়। বিধায় যে কোন আমল করার পূর্বে সে আমল সম্পর্কিত সঠিক আক্বীদা-বিশ্বাস আমাদের অবশ্যই রাখা চাই। এ মর্মে বলতেই হয় যে, বছর পেরিয়ে আমাদের মাঝে যখন শাবান মাস আসে, তখন শবে বরাত নিয়ে আমাদের ব্যস্ততার কোন সীমা থাকে না। কারণ আগামী এক বছরের বাজেট যে শবে বরাতেই স্থির হয় এমন আক্বীদা-বিশ্বাস আমাদের মাঝে জমে বসেছে।
প্রকৃত পক্ষে এ রাতে আসালেই বাজেট পেশ করা হয় কি না? বা এরাতকে শবে বরাত বলা যাবে কি না? এবং এরাত সম্পর্কে কুরআন-সুন্নার সঠিক দিক নির্দেশনা কি? তা থেকে আমরা অনেক দুরে! তাই শবে বরাত সম্পর্কে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা স্মরণ রাখা দরকার, যাতে করে সে রাতের আমলের সাথে সাথে আমাদের আক্বীদা-বিশ্বাসটাও ঠিক হয়ে যায়।
হা;ঁ শাবান মাসে একটি রাত রয়েছে, যে রাতটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ। হাদীস শরীফে এ রাতের নাম করণ করা হয়েছে
(لیلۃ النصف من شعبان)
যার বাংলা অর্থ “ শাবান মাসের মধ্যরাত” তবে রাতটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ হওয়ার কারণে কেউ কেউ এ রাতকে (لیلۃ مبارکۃ)
(লাইলাতুম মুবারকাহ) বলেও আখ্যায়িত করেছেন। আবার এ রাতে যেহেতু সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয় এ জন্য রাতকে
লাইলাতুল বারাআত
(لیلۃ البراءۃ )
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার রাতও বলা হয়।
এ সম্পর্কীয় সহীহ বর্ণনাসমূহের মধ্যে থেকে একটি বর্ণনা:
" يطلع الله تبارك و تعالى إلى خلقه ليلة النصف من شعبان ، فيغفر لجميع خلقه
إلا لمشرك أو مشاحن "
قال الألباني في " السلسلة الصحيحة " ৩ / ১৩৫ :حديث صحيح ، روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضا و هم معاذ ابن جبل و أبو ثعلبة الخشني و عبد الله بن عمرو و أبي موسى الأشعري و أبي هريرةو أبي بكر الصديق و عوف ابن مالك و عائشة . أما حديث معاذ فيرويه مكحول عن مالك بن يخامر عنه مرفوعا به . أخرجه ابن أبي عاصم في " السنة " رقم ( ৫১২ - بتحقيقي ) حدثنا هشام بن خالد حدثنا أبو خليد عتبة بن حماد عن الأوزاعي و ابن ثوبان ( عن أبيه ) عن مكحول به . و من هذا
الوجه أخرجه ابن حبان ( ১৯৮০ ) و أبو الحسن القزويني في " الأمالي " ( ৪ / ২ ) و أبو محمد الجوهري في " المجلس السابع " ( ৩ / ২ ) و محمد بن سليمان الربعي في جزء من حديثه " ( ২১৭ / ১ و ২১৮ / ১ ) و أبو القاسم الحسيني في " الأمالي ")ق ১২ / ১ ) و البيهقي في " شعب الإيمان " ( ২ / ২৮৮ / ২ ) و ابن عساكر في " التاريخ " ( ১৫ / ৩০২ / ২ ) و الحافظ عبد الغني المقدسي في " الثالث و التسعين
من تخريجه " ( ق ৪৪ / ২ ) و ابن المحب في " صفات رب العالمين " ( ৭ / ২ و ১২৯ / ২ و قال : " قال الذهبي : مكحول لم يلق مالك بن يخامر " .قلت : و لولا ذلك لكان الإسناد حسنا ، فإن رجاله موثوقون ، و قال الهيثمي في مجمع الزوائد " ( ৮ / ৬৫ ) : " رواه الطبراني في " الكبير " و " الأوسط "
و رجالهما ثقات " .
অর্থ: সাবান মাসের মধ্য রাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মাখলুকের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে:
فعن عائشة رضي الله عنها عن النبي صلى الله عليه وسلم قال:
إن الله تعالى ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا، فيغفر لأكثر من عدد شعر غنم كلب (الترمذي، وابن ماجة، وأحمد
– إن الله – تعالى – ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا ، فيغفر لأكثر من عدد شعر غنم كلب الراوي: عائشة: الألباني – المصدر: تخريج مشكاة المصابيح – الصفحة أو الرقم: ১২৫১ خلاصة حكم: صحيح لغيره
অর্থ: হযরত আয়েশা রা. বলেন, রসূল সা. বলেছেন: সাবান মাসের মধ্য রাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মাখলুকের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং কাল্ব
( কাল্ব; আরবের প্রশিদ্ধ একটি গোত্র, যাদের ছাগল-ভেড়ার পরিমাণ ছিলো অনেক) গোত্রের ছাগল-ভেড়ার পশমের চেয়েও বেশী সংক্ষক মানুষকে ক্ষমা করেন।
সার কথা, সাবান মাসের মধ্য রাত ফজিলতপূর্ণ একটির রাত, এ রাতের আমারা তিনটি নাম পেলাম
ক. (لیلۃ النصف من شعبان) “ শাবান মাসের মধ্যরাত”
খ. রাতটি বরকতময় হওয়ার কারণে বলা হয়, (لیلۃ مبارکۃ)
এটি এরাতের গুণবাচক নাম।
গ. এ রাতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয় তাই এ রাতকে (لیلۃ البراءۃ )
ও বলা হয়,
এটিও এ রাতের গুণবাচক নাম।
তিনটি নামের মধ্যে থেকে এ রাতকে আমরা প্রথম নামেই আখ্যায়িত করবো, কারণ বাকি দুইটি নাম নিয়ে আমাদে মাঝে বিরাট বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আছে।
لیلۃ مبارکۃ ‘ লাইলাতুম মুবারাকাহ’ এ জন্যে বলা যাবে না যে, এ নাম করণের কারণেই কেউ কেউ মনে করনে থাকেন সূরা দুখানের দ্বিতীয় আয়াতে এ রাতের কথাই বলা হয়েছে, যেমন সুরা দুখানে ইরশাদ হয়েছে:
حم (১) والكتاب المبين (২) إنا أنزلناه في ليلة مباركة إنا كنا منذرين (৩) فيها يفرق كل أمر حكيم (৪) أمرا من عندنا إنا كنا مرسلين (৫)
অর্থ:১. হা-মীম। ২.শপথ কিতাবের, যা (সত্যের )সুষ্পষ্টকারী। ৩.আমি এটা নাযিল করেছি এক মুবারক রাতে (কেননা) আমি মানুষকে সতর্ক করার ছিলাম।৪. এ রাতেই প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়/হেকমতপূর্ণ বিষয় আমার নির্দেশে স্থির করা হয়। (সূরা দুখান; আয়াত, ১-৪)
আবার এ সূরাতে একথাও বলা হয়েছে যে, এ রাতে অর্থাৎ (ليلة مباركة) কায় প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ ও হেকমতময় বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
যেহেতু শবে বরাতের আর একটি নাম (ليلة مباركة) এলাইলাতুম মুবারকাহ- আর এ সুরাতে বলা হয়েছে (ليلة مباركة) লাইলাতুম মুবারকাকায় প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ ও হেকমতময় বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তাই শুধু নামের সাথে মিল থাকার কারণেই একদল বলে থাকেন, ভাগ্যলিপি ও এক বছরের বাজেট এ রাতেই পেশ করা হয়, আর এমন ধারণা পোষণ করা মোটেও ঠিক নয় ,কারণ সঠিক মত হচ্ছে বাজেট পেশ করা হয় কদরের রাতে।
এ পথ ধরেই তৃতীয় নামটির মধ্যেও একদল পরিবর্তন ঘটায়। নামটি ছিলো (لیلۃ البراءۃ) লাইলাতুল বারাআত, “লাইল” আরবী শব্দ যার অর্থ রাত এটি বাদ দিয়ে এর পরিবর্তে আনা হলো “ شب ” (শব) শব- শব্দের অর্থও রাত। আর براءۃ (বারাআত) আরবী শব্দটিকে পরিবর্তন করে বলা হলো برا ت (বরাত) পুরা নাম দ্বারালো: شب برا ت (শবে বরাত)।
براءۃ শব্দ থেকে প্রথমে আলিফের পরের গোল হামজাটাকে ফেলে দিয়ে গোল ‘তা’ কে লম্বা ‘তা’ দ্বারা পরিবর্তন করা হলো, ফলে براءۃ (বারাআত) আরবী শব্দটি; برا ت (বরাত)-ফারসী শব্দে রূপান্তরিত হলো। এবার براءۃ (বারাআত) ও برا ت (বরাত) শব্দদয়ের অর্থের মধ্যে আসমান যমীন ফারাক এসে গেল। কারণ কারণ براءۃ বারাআত শব্দের অর্থ: মুক্তি দেওয়া, কিষ্কৃতি দেওয়া আর
برا ت (বরাত) শব্দের অর্থ হচ্ছে তাকদীর বা ভাগ্য।
এবার লক্ষ করুন, براءۃ (বারাআত) শব্দটির মূল ধাতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে তার অর্থের মধ্যেও আসমান-যমীন ফারাক এসে গেল।
সার কথা شب برا ت (শবে বরাত) এর অর্থ হচ্ছে বাজেটের রাত বা ভাগ্যলিপির রাত আর براءۃ شب (শবে বারাআত) এর অর্থ হচ্ছে মুক্তি দেওয়া বা কিষ্কৃতি দেওয়ার রাত।
আম মুসলমানগণ শবে বরাত মানে ভাগ্যলিপির রাতই মনে করে থাকেন, তাই তাদের দিলে এ বিশ্বাস জমে বসেছে যে, শবে বরাতেই আগামী এক বছরের বাজেট স্থির করা হয়।
প্রক্ষান্তরে এ রকম ধারণ পোষণ করাটা মোটেও ঠিক না, কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসীরবেত্তাগণ এ মত পোষণ করেছেন যে, বাজেট পেশ করা হয় ক্বদরের রাতে বা শবে ক্বদরে, শবে বরাতে নয়।
দলীল স্বরুপ তাঁরা সূরা দুখানের এ আয়াত পেশ করেন। ইরশাদ হচ্ছে-
حم (১) والكتاب المبين (২) إنا أنزلناه في ليلة مباركة إنا كنا منذرين (৩) فيها يفرق كل أمر حكيم (৪)
অর্থ:১. হা-মীম। ২.শপথ কিতাবের, যা (সত্যের )সুষ্পষ্টকারী। ৩.আমি এটা নাযিল করেছি এক মুবারক রাতে (কেননা) আমি মানুষকে সতর্ক করার ছিলাম।৪. এ রাতেই প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়/হেকমতপূর্ণ বিষয় আমার নির্দেশে স্থির করা হয়। (সূরা দুখান; আয়াত, ১-৪)
তাফসীর: প্রতি বছর কোন ব্যক্তি জন্ম নেবে, তাকে কী পরিমাণ রিযিক দেওয়া হবে, কার মৃত্যু কবে হবে ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থির করা হয় এবং তা কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট ফেরেস্তাদের দায়িত্বে দেওয়া হয় কোরআন নাযিলের রাতে। আর কোরআন নাযিল হয়েছে রমযান মাসে, যেমন ইরশাদ হচ্ছে:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ
অর্থ:মাহে রমযান হলো সেই মাস, যে মাসে নাযিল করা হয়েছে কোরআনকে । (বাকারা; ১৮৫)
আর মাহে রমযানের যে রাতে কোরআন নাযিল করা হয়েছে সে রাতের নাম হচ্ছে, লাইলাতুল ক্বদরা বা শবে ক্বদর। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
إنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
অর্থ: নিশ্চয় আমি এটা (অর্থাৎ কুরআন) শবে ক্বদরে নাযিল করেছি।
(সূরা ক্বদর; ১)
সার কথা দ্বারায়, পবিত্র কুরআন মাজিদে বাজেটের রাত ঘোষণা করা হয়েছে কুরআন নাজিলের রাতকে আর কুরআন নাযিল হয়েছে রমযান মাসে শবে কদরে, বিধায় বাজেটও এ রাতেই স্থির করা হয়। বিধায় শবে বরাতে বাজেট ঘোষণা করা হয় এমন ধারণা পোষণ করা মোটেও ঠিক নয়, এমন ধারণা করা কোরআন সুন্নাহ বিরোধী, তাই সঠিক ধারণা পোষণ করা দরকার । হে আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।আমীন।
No comments:
Post a Comment